চেনা প্রাণীর অজানা কথা

আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়াবহ জন্তুটির নাম হিপোপটেমাস। সিংহ, কুমির অথবা সাপের কামড়ে সেখানে বছরে যত লোক মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় হিপোর আঘাতে। পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম মানব ওসাইন বোল্ট ঘণ্টায় ৩০ মাইল বেগে দৌঁড়তে পারেন, কিন্তু হিপোপটেমাস তারচেয়ে অনেক বেশি বেগে ছুটতে পারে। আফ্রিকায় একটি খ্যাপা হিপোর আঘাতে ৪শ’রও বেশি লোক নিহত হয়েছে। একটি হিপোর ওজন হতে পারে ৯০০০ পাউন্ড। তাদের গালের দাঁত ব্লেডের চেয়ে ধারাল। হিপো প্রধাণত ঘাস খায়। মানুষ ধরে খাওয়ার কোনো অভিজ্ঞতা এদের নেই। তবে কোনো কারণে একবার যদি তারা খেপে যায় তাহলে কামড়ে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারে। হিপোরা যখন ভূমিতে বিচরণ করে অধিকাংশ আক্রমণ তখনই করে থাকে। যখন তারা পানিতে থাকে তখন যদি কেউ নৌকা নিয়ে তাদের মাথার উপর দিয়ে চলতে থাকে তখনই দেখা দেয় বিপত্তি। অবস্থা বুঝে নৌকার মাঝি দ্রুত পালিয়ে যেতে পারলেও নৌকায় থাকা যাত্রীরা পড়ে বিপদে।

যে প্রাণী পানি খায় না
গাছের প্রাণী কোয়ালা। এরা মাটিতে নামে না সহজে। পানিও খায় না কখনও। তাহলে বাঁচে কী করে? পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া কি কেউ বাঁচে! ইউক্লিপটাস গাছের পাতা থেকে কোয়ালা তাদের পানির অভাব পূরণ করে। এই পাতায় পঞ্চাশ ভাগ পানি থাকে। পানির প্রয়োজন হলেই তারা বেশি বেশি ইউক্লিপটাসের পাতা খায়। শুধু প্রাকৃতিক প্রয়োজনে এরা মাটিতে নামে। প্রয়োজন মিটে গেলে সাথে সাথে গাছের ডালে ফিরে যায়।

নীল চিংড়ি ও হলুদ চিংড়ি
আমরা যে লবস্টার বা চিংড়ি খাই তার শরীরের রঙ কী? স্বচ্ছ সাদাটে গায়ের রঙ চিংড়ির। কখনও কি চিন্তা করা যায় চিংড়ির গায়ের রঙ নীল বা হলুদ হতে পারে? হ্যাঁ, প্রতি চার মিলিয়ন চিংড়ির মধ্যে একটি করে চিংড়ি জন্মগত কারণে নীলবর্ণের হতে পারে এবং প্রতি ৩০ মিলিয়নের মধ্যে একটি হলুদ বর্ণের হতে পারে।

উট
আমরা জানি উটকে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়। আরব মরুভুমির আদি বাহন উট। ৫শত পাউন্ড বোঝা নিয়ে একটি উট স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে মরুভূমির ভিতর দিয়ে। সে অবস্থায় তারা পানি এবং খাবার ছাড়াই অনেকদিন ধরে চলতে পারে। ওজনে এরা ৩শ থেকে ৬শ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত এরা বাঁচে। ব্যাকট্রেন ও ড্রমেডারি এই দুই ধরনের উট। যাদের পিঠে দুইটি কুঁজ থাকে তাদেরকে বলে ব্যাকট্রেন উট। এককুঁজ বিশিষ্ট উটকে বলে ড্রমেডারি। কুঁজে জমে থাকে চর্বি জাতীয় পদার্থ। খাবার হজম হওয়ার সময় এক গ্রাম চর্বি গলে এক গ্রাম পানি বের হয়। যখন খাবার ও পানির অভাব দেখা দেয় তখন কুঁজে সঞ্চয় করে রাখা চর্বি থেকে তাদের খাদ্যের অভাব পুরণ হয়ে একসময় কুঁজ শুকিয়ে যায়। পর্যাপ্ত পানি পান করার পর তাদের কুঁজ আবার বড় হয়। মাত্র ১৩ মিনিট সময়ের মধ্যে এরা ১১৩ লিটার পানি পান করতে পারে। ঘণ্টায় ২৫ মাইল বেগে এরা দৌঁড়ায় তবে ৪০ মাইল পর্যন্ত এরা দৌঁড়তে সক্ষম। ছোট ছোট ঘাস, লতাপাতা এরা খায়। খিদে পেলে চামড়ার জুতো পর্যন্ত চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। উটের দেহে ডিমের মতো বিশেষ এক ধরনের লাল রক্ত কণিকা থাকে যার সাহায্যে পানি ছাড়াই এরা শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত কণিকা পৌঁছে দেয়। এর সুবাদে উট পানি ও খাবার ছাড়া একটানা ছয় মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

বিষদাঁত
ইংরেজি ফ্যাঙ শব্দের অর্থ হল বিষদাঁত। এই দাঁত দেখতে লম্বা এবং সুচালো। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বেলায় ফ্যাঙ হল শিকারি দাঁত। যাদের ফ্যাঙ আছে তাদের উপরের মাড়িতে দুটো এবং নিচের মাড়িতে দুটো এই চারটি ফ্যাঙ দাঁত। এর সাহায়্যে তারা শত্র“কে কামড়ায়, মাংস ছিড়ে খায়। সাপের বেলায় বিষ ঢোকানোর জন্য এই দাঁত থাকে। মাকড়সার ফ্যাঙ দাঁত আছে। ড্রাগন, দৈত্য এবং রক্তচোষাদের বেলাও ফ্যাঙ দাঁত দেখা যায়। কিছু কিছু প্রাণীর বেলায় এই ফ্যাঙ দাঁত দিয়েই তাকে চেনা যায়। তৃণভোজী এবং মাংশাসী দুই ধরনের প্রাণীর মধ্যে বিষদাঁত লক্ষ করা যায়। কিন্তু কিছু সর্বভুক প্রাণী আছে যেমন বাদুড় তাদের মধ্যে অন্যতম। তারা সাধারণত এই ফ্যাঙ দিয়ে শিকার ধরতে পারে এবং খুব তাড়াতাড়ি মেরে ফেলতেও পারে। একটি বিড়াল পর্যন্ত তারা সহজে ঘায়েল করতে পারে এই ফ্যাঙ দাঁতের সাহায্যে। সর্বভুক প্রাণী যেমন ভল্লুকের ফ্যাঙ দাঁত আছে। তারা তা প্রয়োগ করে মাছ ও অন্যান্য প্রাণী শিকার করার জন্য। কিন্তু খাবার খাওয়ার সময় তারা এই দাঁত ব্যবহার করে না। মৌমাছির ফ্যাঙ আছে। শত্র“কে ভয় দেখাতে এবং লড়াই করতে তারা তা কাজে লাগায়। মানুষের বেলায় তুলনামূলক সরু দাঁত থাকলেও তাকে বিষদাঁত বলে না।