কল্পবিজ্ঞানের সঙ্গে কম-বেশি আমরা পরিচিত। কল্পিত বিজ্ঞান নগরীর স্বপ্ন আমাদের অনেকের মধ্যেই আছে। ধরা যাক, আপনি বাড়িতে ঢোকার সময় আপনার মোবাইল ফোন থেকে একটা বাটন টিপে দিলেন। আর অমনি আপনার বাড়ির দরজা খুলে গেল। কোনো ঝামেলা ছাড়া, ডোরবেল বাজানো ছাড়া কিংবা দরজায় কড়া-নাড়া ছাড়াই আপনি ঢুকে পড়লেন নিজের বাড়িতে। অথবা সোফার ওপর গা এলিয়ে দিয়ে টিভির রিমোর্ট খুঁজতে হল না। আপনি চাইলেন আর অমনি টিভিটা অন হয়ে গেল। টিভিটা আবার শুধু যে ঘরের পাশ দেয়ালে সেট করা, তা নয়। ঘরের সিলিঙে তাকিয়েও আপনি টিভি দেখতে পারছেন। খানিকবাদে আপনার আরো একটা ইচ্ছে পূর্ণ হল। ট্রে ভর্তি নাস্তা আর বিকেলের চা চলে এলো আপনার সামনে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবছেন, আহ! জীবনটা এত সহজ! এত মধুর!
এমন সহজ আর মধুর জীবন যাপন করা যে খুব কঠিন, তা কিন্তু নয়। এমন মধুর জীবন সকলেই কম-বেশি চেয়ে থাকি। দুনিয়া যেভাবে বিজ্ঞান আর উদ্ভাবনে উন্নত হচ্ছে, তাতে এমন জীবন ভোগ করতে বেশি দেরি নেই। অবশ্য দুনিয়ার কিছু কিছু শহরে ইতিমধ্যেই তা শুরু হয়ে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার শহর সংডোর কথাই ধরা যাক। প্রযুক্তির দিক দিয়ে দুনিয়ার অনেক নামি দামি শহরই হয়ে উঠেছে কল্পবিজ্ঞানের শহরের মতো। এদের সবাইকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে আছে সংডো। শহরটা কিন্তু খুব একটা বিখ্যাত নয়। বলা যায় অখ্যাত। এই অখ্যাত শহরই প্রযুক্তির কল্যাণে দুনিয়াজুড়ে বিখ্যাত হয়ে উঠছে। পৃথিবীর অন্যতম হাইটেক ক্যাপিটালও বলা হচ্ছে শহরটাকে।
এমনিতেই কোরিয়ার অন্য শহরগুলোও বেশ উন্নত। সিউলের মাটির তলার রেলওয়েতেও রয়েছে দ্রুতগতির ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সুবিধা। রাস্তায় হাঁটার সময়েও দ্রুত ইমেইল পাঠানোর সুবিধা তো আছেই। আছে ভিডিও দেখারও সুযোগ। রেলস্টেশন থেকে বের হবার সময় আশপাশের বাসের সময়সূচিও দেখে নেয়া যায় ইলেকট্রনিক প্যানেলে। আর স্যামসাং এর মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো সহজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাড়ি কিংবা অফিস-আদালতের যন্ত্রপাতিগুলোকে মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কথা হচ্ছে, সিউলের মতো এমন উন্নত শহর থাকতে আবার সংডোর মতো আলাদা শহরের দরকারটা কী?
প্রযুক্তিগত উন্নত একটা শহর মানেই হচ্ছে কল্পবিজ্ঞান জাতীয় যন্ত্র তৈরির সুযোগ। সংডো শহরটিতে আছে তাপমাত্রা, শক্তির ব্যবহার এবং রাস্তাঘাটের ট্র্যাফিক মাপার সেন্সর। এগুলো নাগরিকদের নিমিষেই সতর্ক করে দেবে বিভিন্ন বিষয়ে। যেমন বাস আসতে দেরি করছে কিনা। আর দেরি করলে কেন করছে। অথবা স্থানীয় প্রশাসনকেও এটি যে কোনো সমস্যা সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দিতে পারবে।
আর এসব প্রযুক্তির অনেকগুলোই রাখা হয়েছে পরিবেশের কথা মাথায় রেখে। যেমন ইলেকট্রিক গাড়ির রিচার্জ স্টেশন এবং পানি শোধনাগার। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও অন্যরকম। অনেক খুঁজেও শহরের রাস্তাঘাটে ময়লার গাড়ি পাওয়া যাবে না। প্রত্যেকটি বাড়ির রান্নাঘর থেকে আলাদাভাবে ময়লা টেনে নেয়া হয় মাটির তলার টানেল দিয়ে। আর সেগুলো গিয়ে জমা হয় একটি প্রোসেসিং সেন্টারে।
ওই বর্জ্য দিয়েও শক্তি উৎপাদন করার ব্যবস্থা করা হবে শহরের জন্য। তবে সংডোর অনেক প্রযুক্তি এখনও রয়েছে পরিকল্পনা হিসেবেই। কারণ শহরটি এখনও নাগরিকদের ততটা টানতে পারেনি। এর মূল কারণ সম্ভবত খরচ। এই শহরে বাস করতে গেলে খরচটা তুলনামূলকভাবে খানিকটা বেশিই পড়ে। তবু অনেকেই যাচ্ছেন সংডোতে। শহরটি গড়েও উঠছে একটি পার্ককে কেন্দ্র করে। শহরের নকশা এমন যে প্রত্যেক নাগরিক পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটেই অফিসে যাওয়া আসা করতে পারবেন। দুপুরের খাবারের সময়ও তারা পার্কে চলে আসেন। কল্পবিজ্ঞানের মতো এমন শহর কল্পনাবিলাসী মানুষকে না টেনে কি পারে?