ত্রিপুরা - বাংলাদেশী উপজাতী জনগোষ্ঠী

ত্রিপুরা বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। এরা ছিল বর্তমান ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরার পার্বত্য এলাকার অধিবাসী। পরবর্তীতে এরা নিজ এলাকা ছেড়ে বাংলাদেশর মূলত কুমিল্লা, সিলেট এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বসতি স্থাপন করে। এরা অবশ্য নিজেদের টিপরা, তিপারা বা তিপ্রা নামেও অভিহিত করে। চাকমারা এদেরকে তিবিরা, মারমাগণ ম্রোং, লুসেইগণ তুইতুক এবং পাঙ্খোগণ বাই বলে থাকে। অনেকের মতে টিপরারা আসাম, বার্মা এবং থাইল্যান্ডের অধিবাসী সাধারণ এক উপজাতির পূর্বপুরুষ বডো জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। কোন এক সময় বর্তমান ত্রিপুরা থেকে শুরু করে আরাকাম সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় পাটিকারা নামে একটি রাজ্য ছিল। কেউ কেউ মনে করেন পাটিকারা শব্দটিই ত্রমান্বয়ে টিকারা, টিপারা ও ত্রিপুরায় পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে তিনটি পার্বত্য জেলা ত্রিপুরাদের প্রধান বসতি এলাকা বলে পরিচিত হলেও অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেট ও কুমিল্লাসহ চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফরিদপুর, বরিশাল এবং ঢাকাতেও ত্রিপুরাদের বসতি ছিল। ১৮৮১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কুচবিহার ও বাংলাদেশে ত্রিপুরাদের যে বসতি ছিল তার পরিসংখ্যান হচ্ছে কুচবিহারে ১,১২৬ জন, ঢাকায় ৪ জন, ফরিদপুরে ১০ জন, বরিশালে ৪৫ জন, নোয়াখালীতে ১৬ জন, কুমিল্লায় ১,৮৯৫ জন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৫,০৪৫ জন এবং সিলেট ও অন্যান্য স্থানে ২৬৮ জন। কুচবিহারের ১,১২৬ জন বাদ দিলে ১৮৮১ সালের আদমশুমারি বাংলাদেশ এলাকায় বসবাসকারী ত্রিপুরাদের সংখ্যা রেকর্ড করেছিল ১৭,৩৮৩ জন। পরবর্তী ১২০ বছরে ত্রিপুরারা মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকাতেই নিজেদের বসতি কেন্দ্রীভূত করেছে। ১৯৮১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল উপজাতির মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে তারা ছিল ১২.৩১ শতাংশ। সংখ্যা বিচারে ত্রিপুরার পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা এবং মারমার পরই তৃতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। ১৯৯১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট উপজাতীয় জনসংখ্যার ৬.৬% ছিল ত্রিপুরা এবং তাদের সংখ্যা ছিল ৭৯,৭৭২ জন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব এলাকার মধ্যে আবার খাগড়াছড়ি এবং রামগড়ে রয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ ত্রিপুরার বসতিকেন্দ্র।