মাথা কেটে ফেলা হলো মুরগিটার। এরপরও দিব্যি খাড়া। কেবল তাই নয়, ওভাবে কাটিয়ে দিল প্রায় দেড় বছর। মুরগিটি পরে ‘মিরাকল মাইক’ নামে পরিচিতি পায়।
১৯৪৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ফ্রুইটা শহরের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। মুরগির খামারি লয়েড ওলসেন ও তাঁর স্ত্রী ক্লারা ৪০-৫০টি মুরগি জবাই করেন। কিন্তু এর মধ্যে একটি মুরগি শুরু করল অদ্ভুত আচরণ। মাথা কাটার পরও এটি দাঁড়িয়ে রইল। চলাফেরা করতে লাগল। সাধারণত মুরগির মাথা কেটে ফেলার পর কয়েক মুহূর্ত নড়াচড়া করতে দেখা যায়। কিন্তু এই মুরগিটি দৌড়াতে শুরু করল, যেন আর থামবে না। দিন গড়িয়ে রাত আসে, মুরগিটি তখনো জীবিত। আপেল রাখার একটি বাক্সে মুরগিটিকে রেখে ঘুমাতে যান ওলসেন ও ক্লারা। সকালে ঘুম থেকে উঠে ওলসেন বাক্স খুলে দেখেন মুরগিটি দিব্যি বেঁচে আছে।
১০ সেপ্টেম্বরে ঘটে যাওয়া এই মুরগি নিয়ে বিশেষ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি ম্যাগাজিন। ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন ট্রয় ওয়াটার্স। লয়েড ওলসেন তাঁর প্রপিতামহ।
ওয়াটার্স বলেন, তিনি তাঁর প্রপিতামহের কাছে এই গল্প শুনেছেন। ওলসেন ফ্রুইটা শহরে মাংস বিক্রেতাদের কাছে মুরগি সরবরাহ করতেন। ঘোড়াগাড়িতে করে বাজারে মুরগি আনতেন তিনি। একদিন মাথা কাটা মুরগিটি আনেন বাজারে। সেখানে সবাইকে ডেকে এই মুরগিটি দেখান। এমনকি মাথাহীন মুরগি নিয়ে বাজি ধরা শুরু করেন।
মাথা কাটা মুরগির গল্প দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় খবরের কাগজে ওলসেন সাক্ষাৎকার দেন। এরপর থেকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে মাথাহীন মুরগির গল্পটি।
এই মুরগিটি বিভিন্ন প্রদর্শনীতে নিয়ে যেতে শুরু করেন তিনি। প্রথমে তাঁরা সল্ট লেক সিটি ও উতাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যান এ মুরগিটিকে। গবেষকেরা মুরগিটি নিয়ে নানা পরীক্ষা চালান। গুজব রটে যে, মুরগিটির বেঁচে থাকার রহস্য বের করতে আরও বেশ কিছু মুরগি জবাই করেন তাঁরা।
নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেদের মতে, যখন কোনো মুরগি জবাই করা হয় তখন কিছু সময়ের জন্য স্পাইনাল কর্ড সার্কিটে অক্সিজেন থাকতে পারে। মস্তিষ্ক থেকে কোনোরূপ ইনপুট ছাড়াও এই সার্কিটগুলো কাজ করতে সক্ষম। মস্তিষ্কের নিউরন সক্রিয় হয়ে যায় এবং পা চলতে শুরু করে। তবে মাইকের ক্ষেত্রে এটি দুর্লভ একটি ঘটনা। সাধারণত মুরগি জবাই করার পর কিছুক্ষণ পর্যন্ত ছুটতে পারে। এটা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু দেড় বছর নয়।
ওলসেন বলেন, ঠোঁট, কান, চোখসহ পুরো মাথা কেটে যাওয়ায় মুরগিটিকে তাঁরা খাদ্যনালি দিয়ে খাওয়াতেন। সিরিঞ্জ দিয়ে মাঝেমধ্যে গলা পরিষ্কার করে দিতেন। এভাবেই দেড় বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিল মাইক।
গবেষক টম স্মুলডার্স বলেন, মানুষের যদি মাথা কাটা পড়ে তবে মস্তিষ্ক পুরোপুরি অক্ষম হয়ে যায়। কিন্তু মুরগির ক্ষেত্রে ভিন্ন বিষয়। মুরগির মাথার সামনের দিকে ব্রেনের পরিমাণ থাকে খুবই অল্প। এর চোখ ও মাথার খুলির পেছনে মস্তিষ্ক বেশি থাকে। ওলসেনের দাবি অনুযায়ী, ধারালো কোপ দিয়ে মাইকের ঝুঁটি, মুখ, চোখ আলাদা করা হয়েছিল। এতে মাইকের মস্তিষ্কের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত রক্ষা পায় যা শরীর, হৃৎপিণ্ড শ্বাস-প্রশ্বাস, ক্ষুধা প্রভৃতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চালু রেখেছিল। অবশ্য পরে মাইকের মতো মাথা হীন মুরগি তৈরির চেষ্টা কখনো সফল হতে দেখা যায়নি।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো