কর্মসংস্থান ব্যাংক, বাংলাদেশ

কর্মসংস্থান ব্যাংক ১৯৯৮ সালের কর্মসংস্থান ব্যাংক আইনের আওতায় দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে  দেশের বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের ঋণ সহায়তা ও আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সরকার কর্তৃক বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৩০ জুন ১৯৯৮ সালে প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যের ৩০ মিলিয়ন শেয়ারে বিভক্ত ৩০০০ মিলিয়ন টাকার অনুমোদিত মূলধন নিয়ে ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু হয়। এর মোট পরিশোধিত মূলধন ১১৮৫ মিলিয়ন টাকার (২০০৮) মধ্যে ৭৫% বাংলাদেশ সরকার এবং ২৫% জনতা, অগ্রণী, সোনালী, উত্তরা, রূপালী, ন্যাশনাল, আইএফআইসি, বেসিক, ইসলামী ব্যাংকসমূহ এবং কিছু অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানি পরিশোধ করে। সরল সুদে এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের স্বাবলম্বী করে দারিদ্র্য বিমোচনই কর্মসংস্থান ব্যাংকের লক্ষ্য। কর্মসংস্থান ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। বর্তমানে ব্যাংকটি ১৩৪টি শাখার মাধ্যমে সমগ্র দেশব্যাপী ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কর্মসংস্থান ব্যাংকের বর্তমান জনবল ৮১৭, যার মধ্যে ২৩৩ জন কর্মকর্তা।

কর্মসংস্থান ব্যাংক বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য নিজস্ব কর্মসূচি হিসেবে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান কর্মসূচি এবং সরকারের বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে কৃষিভিত্তিক শিল্পঋণ প্রদান কর্মসূচি ও শিল্পকারখানা/প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছা অবসারপ্রাপ্ত/কর্মচ্যুত শ্রমিক/কর্মচারীদের কর্মসংস্থানের জন্য জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। কর্মসংস্থান ব্যাংক নিজস্ব ঋণ কর্মসূচির আওতায় ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১৪,৬৯৯৯ জন বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের মধ্যে ক্রমপুঞ্জীভূত ৬৩৭০ মিলিয়ন টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এ সময় পর্যন্ত আদায়যোগ্য ৫৩৮৮ মিলিয়ন টাকা ঋণের বিপরীতে ৪৮৬৩ মিলিয়ন টাকা আদায় হয়েছে। ক্রমপুঞ্জীভূত আদায়ের হার শতকরা ৯০.৩ ভাগ। কৃষিভিত্তিক শিল্প ঋণ প্রদান কর্মসূচির আওতায় ২০০৯ সাল পযন্ত ১৮৩১ জন উদ্যোক্তার অনুকূলে ৪৮৩ মিলিয়ন টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ ঋণের আদায়যোগ্য ৩২৬ মিলিয়ন টাকার মধ্যে ২৯৭ মিলিয়ন টাকা আদায় হয়েছে। ক্রমপুঞ্জীভূত আদায়ের হার শতকরা ৯১.১ ভাগ। শিল্প কারখানা/প্রতিষ্ঠনের স্বেচ্ছা অবসরপ্রাপ্ত/চাকরিচ্যুত শ্রমিক/কর্মচারীদের কর্মসংস্থানের জন্য জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদান কর্মসূচির আওতায় ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১৩৫৫৬ জন স্বেচ্ছা অবসরপ্রাপ্ত/কর্মচ্যুত শ্রমিক/কর্মচারীর অনুকূলে ৭৩৯ মিলিয়ন টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এবং আদায়যোগ্য ৬৩৮ মিলিয়ন টাকার মধ্যে ৪৭৮ মিলিয়ন টাকা আদায় হয়েছে। ক্রমপুঞ্জীভূত আদায়ের হার শতকার ৭৪.৯ ভাগ। কর্মসংস্থান ব্যাংক বর্তমানে হাঁস-মুরগির খামার, দুগ্ধ খামার, মৎস্য খামার, গরু মোটাতাজাকরণ ও ছাগল পালন, কাপড় ও সেলাই, হস্ত ও কুটির শিল্প, তাঁত শিল্প, মৃৎ শিল্প, সেলুন ও লন্ড্রি, যানবাহন (দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন ব্যতীত), কাঠের ও স্টিলের আসবাবপত্র, বুটিক, কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, গাড়ি মেরামত ও হালকা ইঞ্জিন ওয়ার্কসপ, গ্রামীণ যানবাহন (ভ্যান, রিক্সা, নৌকা ইত্যাদি), স্টেশনারি ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, রেডিও, টিভি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মেরামত, গ্রামীণ স্যানিটারি, ফার্মেসি, নার্সারিসহ অন্যান্য খাতে ঋণ প্রদান করে। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক, উৎপাদনশীল ও সেবামূলক যে কোনো অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ঋণের খাত হিসেবে বিবেচিত হয়।

একক ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে ঋণের সীমা সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা এবং যৌথ ঋণ গ্রহীতার ক্ষেত্রে ঋণের সীমা সর্বোচ্চ ৪০ লক্ষ টাকা। উৎপাদনশীল ও সেবামূলক খাতের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বার্ষিক শতকরা ১০ টাকা এবং বাণিজ্যিক খাতের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বার্ষিক শতকরা ১২ টাকা।
[মোহাম্মদ আবদুল মজিদ - বাংলাপিডিয়া]