গ্রামীণ ব্যাংক দেশের পল্লী অঞ্চলের ভূমিহীন দরিদ্র নারী-পুরুষদের জন্য ঋণ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-এর অধীনে একটি কর্পোরেট সংস্থা হিসেবে ঐ বছরের অক্টোবর মাসে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশেষ ধরনের ব্যাংক। ব্যাংকটি ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতোমধ্যে বিশ্ব জুড়ে খ্যাতিলাভ করেছে। চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন জোবরা গ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক ১৯৭৬ সালে চালু করা পল্লী ব্যাংকিং-এর একটি পাইলট প্রকল্প থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের উৎপত্তি। গ্রামের ভূমিহীন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নির্ভরযোগ্য উপায়ে জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের উপযোগিতা ও সাংগঠনিক কাঠামোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে জোবরা গ্রামে গ্রামীণ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। দরিদ্রদের, বিশেষত মহিলাদের সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করলে তারা উৎপাদনমুখী আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম কি-না এ সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করাও গ্রামীণ প্রকল্পের অপর একটি উদ্দেশ্য ছিল।
প্রকল্পটির আশাব্যঞ্জক ফলাফলের ভিত্তিতে মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল জেলার আরও কয়েকটি গ্রামে এর সম্প্রসারণ ঘটান। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সম্প্রসারিত প্রকল্পের জন্য তহবিলের যোগান দেয়। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ)-এর আর্থিক সহায়তায় ১৯৮২ সালে প্রকল্পটি ঢাকা, রংপুর এবং পটুয়াখালী জেলায় সম্প্রসারণ করা হয়। এতদিনে প্রকল্পটি দরিদ্রদের জন্য একটি ব্যাংকিং কাঠামোতে উন্নীত হয়। ফলে গ্রামীণ প্রকল্পের ব্যাংকিং ইউনিট সৃষ্টিপূর্বক সেগুলিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির স্থানীয় শাখার সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমে ঋণদান ও আদায় কার্যক্রম চালানো হয়। গ্রামীণ প্রকল্পটিকে গ্রামীণ ব্যাংক নামকরণ করে একটি বিশেষায়িত ঋণদান প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শুরুতে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১০০ মিলিয়ন ও ৩০ মিলিয়ন টাকা। ব্যাংকের মূলধন প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যের সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত। এর মোট পরিশোধিত মূলধনের ৪০% ব্যাংকটির ঋণগ্রহীতাগণ এবং অবশিষ্ট ৬০% বাংলাদেশ সরকার ও সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিশোধ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ক্রমান্বয়ে এর কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করা হয়। ফলে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৫০০ মিলিয়ন ও ৩৫৮মিলিয়ন টাকা। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের ৩.৩৫% বাংলাদেশ সরকার, ০.৮৪% সোনালী ব্যাংক, ০.৮৪% বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং ৯৪.৯৭% ঋণগ্রহীতাগণ কর্তৃক পরিশোধিত। ঋণ গ্রহীতাদের পরিশোধিত অংশ তথা ৯৪.৯৭% এর মধ্যে ৪.২৩% পুরুষ ঋণগ্রাহক এবং ৯০.৭৪% মহিলা ঋণগ্রাহকগণ কর্তৃক পরিশোধিত।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভূমিহীন দরিদ্র জনগণকে আয় সৃষ্টিকারী ও জীবিকানির্ভর নানাবিধ কাজের জন্য নগদ অর্থ অথবা উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে জামানতবিহীন ঋণদান করাই গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কাজ। এ ছাড়া, ব্যাংকটি আমানত গ্রহণ করে এবং ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নিজস্ব সমঙদ জামানত রেখে বা অন্যান্য উপায়ে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে। তবে এটি বৈদেশিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করে না। ব্যাংকটি সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়সহ ক্ষুদ্র ব্যবসায় ও শিল্পে বিনিয়োগ করার জন্য এর গ্রাহকদেরকে পেশাগত ও কারিগরি পরামর্শসেবা প্রদান করে। এতদ্ব্যতীত গ্রামীণ ব্যাংক আয়সৃষ্টিকারী কাজ ও ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ এবং সেগুলির স্থায়িত্ব ও সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করে।
আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সুবিধা পাওয়া একটি মানবিক অধিকার- এ নীতির ভিত্তিতে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রচলিত ব্যাংকিং-এ জনগণকে ঋণ গ্রহণের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয়, অর্থাৎ ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিকে সশরীরে ব্যাংকে হাজির হতে হয়। কিন্তু গ্রাহকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ তহবিল নিয়ে তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর নীতির ভিত্তিতে তার ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক পল্লী অঞ্চলের ভূমিহীন ও অশিক্ষিত নারীদেরকে নিজস্ব ব্যবসায়, অন্যান্য আয়সৃষ্টি ও আয়বর্ধক কার্যাবলি হাতে নেওয়া ও চালানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এতে দরিদ্র মহিলারা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে কিছুটা স্বাধীনতা, আত্মনির্ভরশীলতা, আত্মমর্যাদা এবং সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষমতা লাভ করে। বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণের গ্রামীণ মডেল বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশসহ আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি এবং ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ/হ্রাসে ব্যবহূত হচ্ছে। ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ ও আদায়ের পদ্ধতি দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য একটি কার্যকর ও ফলপ্রসু মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি স্বরূপ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছে।
গ্রামীণ ব্যাংক দলভিত্তিকভাবে গ্রাহকদের ঋণ প্রদান করে। ঋণ পরিশোধের জন্য একটি দলের সদস্যগণের যৌথ দায়িত্ব থাকলেও ঐ দলের প্রত্যেক ঋণগ্রহীতা তার গৃহীত ঋণ ও অগ্রিমের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকে। তবে দলের কোন একজন সদস্যের গৃহীত ঋণ পরিশোধের জন্য অন্যান্য সদস্যগণের অনানুষ্ঠানিক দায়িত্ব রয়েছে। ষোলটি মূলনীতির ভিত্তিতে ব্যাংকটি এর সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং ঋণ প্রদান কার্যক্রম চালায়। একটি ঋণগ্রহীতা দলের সকল সদস্যকে ব্যক্তিগতভাবে ঐ ষোলনীতি নিরিখ মুখস্ত, হূদয়ঙ্গম এবং অনুসরণ করতে হয়। কেননা এ নিরিখগুলি তাদেরকে শৃঙ্খলা ও একতা শিক্ষা দেয় এবং উদ্দীপনা, উন্নয়ন ভাবনা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ সকল নিরিখ গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যগণকে নিজ নিজ পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য, জীর্ণশীর্ণ বাড়িতে বসবাস না-করে নিজস্ব বাড়ি তৈরি ও মেরামত করা, বছরব্যাপী শাকসব্জি উৎপাদন, খাওয়া ও বিক্রয়, গাছ লাগানো, পরিবার ছোট রাখা, খরচ কমানো ও সঞ্চয় বৃদ্ধি করা, নিজ স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, পরিবেশকে দূষণমূক্ত রাখা, স্বাস্থ্যসম্মত গভীর পায়খানা তৈরি ও ব্যবহার, আর্সেনিকমুক্ত নলকূপের অথবা সিদ্ধ পানি পান করা, বাল্যবিবাহ পরিহার, যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া পরিত্যাগ করা, অন্যের প্রতি অন্যায় অবিচার করা থেকে বিরত থাকা, সমষ্টিগত ও বৃহৎ বিনিয়োগ হাতে নেওয়া, পারস্পরিক সহযোগিতার নীতি অনুসরণ করা, কোন সদস্য কর্তৃক নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হলে তা পুনঃস্থাপন করা, প্রতি কেন্দ্রে শৃঙ্খলার ব্যবস্থা করা এবং সর্বপ্রকার সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার শিক্ষা প্রদান করে। প্রক্রিয়াকরণ ও উৎপাদন, কৃষি ও বনায়ন, সেবা খাত, ব্যবসায়, রিকশা ও রিকশাভ্যান চালানো, মুদি মালের ব্যবসায় ইত্যাদি কাজের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ প্রদান করে। এ সকল প্রধান খাতের অধীনে অসংখ্য আয়বর্ধনকারী কাজের জন্যও ব্যাংকটি ঋণসুবিধা দিয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকার আমানত লেনদেনের মাধ্যমে ব্যাংকটি ঋণগ্রহিতা সদস্য ও সদস্য বহির্ভূতদের নিকট হতে আমানত সংগ্রহ করে। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখ পর্যন্ত দেশের প্রায় সকল উপজেলাতে গ্রামীণ ব্যাংকের মোট ২,৫৩৯টি শাখা কাজ করছিল। এর শাখাগুলি সারাদেশে ব্যাংকটির মোট ৪০টি যোনাল এবং ২৬৪টি এরিয়া অফিসের অধীনে কাজ করে। উল্লিখিত তারিখ পর্যন্ত ব্যাংকটি দেশের ৮৩,৫৬৬টি গ্রামে মোট ৭৬,৭০,২০৩ জন সদস্যকে ঋণসুবিধা প্রদান করেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০০৮ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪১৮.৯০ বিলিয়ন টাকা। একই তারিখ পর্যন্ত এ ব্যাংকের সঞ্চয়ের ব্যালেন্স ছিল ৬৪.১৮ বিলিয়ন টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির ঋণ আদায়হার প্রায় ৯৮%।
গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৪ সালে গৃহায়ণ ঋণ স্কিম চালু করে। টিনের চালাবিশিষ্ট একটি ঘর নির্মাণের জন্য একজন সদস্য গৃহায়ন ঋণ তহবিলের আওতায় ৮% হার সুদে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে পারে। উক্ত গৃহায়ণ ঋণগ্রহীতা সদস্যগণকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে সর্বোচ্চ ৫বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। স্কিমের আওতায় প্রদত্ত ৮.৭২ বিলিয়ন টাকা ঋণের মাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত ব্যাংকটির সদস্যগণ ৬৬৫,৫৬৮টি গৃহ নির্মাণ করেছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ সেবা ইজারা প্রদান সংক্রান্ত একটি বিশেষ কার্যক্রম চালু রয়েছে এবং এর অধীনে গ্রামীণ জনসাধারণকে সহজে টেলিযোগাযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ ফোন ব্যবস্থা চালু করেছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত ব্যাংকটি তার সকল যোনের প্রায় সকল শাখার মাধ্যমে মোট ৩৫৩,৯০৯টি ফোন বিতরণ করেছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিলের প্রধান উৎসগুলির মধ্যে শেয়ার মূলধন, সাধারণ ও অন্যান্য সঞ্চিতি, ব্যাংক কর্তৃক রক্ষিত কিছু বিশেষ তহবিল, সদস্যদের আমানত ও অন্যান্য তহবিলের স্থিতি এবং ব্যাংক ও অন্যান্য বৈদেশিক উৎস থেকে গৃহীত ঋণ উল্লেখযোগ্য। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত ব্যাংকটির গৃহীত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১.৬৪ বিলিয়ন টাকা এবং তা বাংলাদেশ ব্যাংক, ইফাদ, নোরাড, সুইডিশ সিডা, ফোর্ড ফাউন্ডেশন, ডাচ্ গ্রান্টলোন, ভিআইসি সেঙন এবং ওইসিইএফ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের জিম্মায় বন্ড ও ডিবেঞ্চার ইস্যুর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। এ সকল বন্ড ডিবেঞ্চারের ওপর প্রদত্ত সুদের হার ছিল ৪% থেকে ১০% এর মধ্যে।
শুরু থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির নীট মুনাফার টাকা পুনর্বাসন তহবিলে স্থানান্তর করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে পুনর্বাসন তহবিলের ব্যালেন্স দাঁড়িয়েছে ১.৯৮ বিলিয়ন টাকা। ২০০৬ সাল হতে বিগত ৩ বছর যাবৎ নীট মুনাফার অংশ শেয়ার গ্রহিতারদেরকে বন্টন করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে এ ব্যাংকের মোট পরিসম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৮২.৮০ বিলিয়ন টাকা।
দারিদ্র্য দূরীকরণ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এ ব্যাংকটি সমঙ্রসারিত ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে ভূমিহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাদের আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষায়িত ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈশিষ্ট্যাবলির মধ্যে উচ্চহারে ঋণ আদায়, ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, দলের সদস্যগণকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য দলের সদস্যগণ কর্তৃক উদ্বুদ্ধকরণ, নিজস্ব মাঠকর্মী এবং গৃহীত ঋণের যথাযথ ব্যবহার ও ঋণ পরিশোধ-প্রক্রিয়া সরাসরি তত্ত্বাবধান, পরামর্শ-সেবা প্রদান ও নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি সবিশেষ গুরুত্বপুর্ণ।
সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত একজন চেয়ারম্যানসহ ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদ গ্রামীণ ব্যাংকের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। চেয়ারম্যান ব্যতীত ১২ জন পরিচালকের মধ্যে ৯ জন ব্যাংকটির দেশব্যাপী অসংখ্য কেন্দ্রের মহিলা সদস্যগণ কর্তৃক মনোনীত হয়। ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে ৮/১২টি বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে এবং এগুলি হচ্ছে কেন্দ্রীয় হিসাব, প্রশাসন, সংস্থাপন, প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাাতিক কর্মসূচি, অবলোকন ও মূল্যায়ন, সার্ভিসেস, নিরীক্ষণ, সমন্বয় ও পরিচালনা-পূর্বাঞ্চল, সমন্বয় ও পরিচালনা-পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ, গ্রামীণ ব্যাংক সচিবালয় এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সচিবালয়। এছাড়া প্রযুক্তি ও উন্নয়ন, নির্মাণ, বিশেষ কর্মসূচি এবং পরিকল্পনা শাখা প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।
প্রকল্পটির আশাব্যঞ্জক ফলাফলের ভিত্তিতে মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল জেলার আরও কয়েকটি গ্রামে এর সম্প্রসারণ ঘটান। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সম্প্রসারিত প্রকল্পের জন্য তহবিলের যোগান দেয়। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ)-এর আর্থিক সহায়তায় ১৯৮২ সালে প্রকল্পটি ঢাকা, রংপুর এবং পটুয়াখালী জেলায় সম্প্রসারণ করা হয়। এতদিনে প্রকল্পটি দরিদ্রদের জন্য একটি ব্যাংকিং কাঠামোতে উন্নীত হয়। ফলে গ্রামীণ প্রকল্পের ব্যাংকিং ইউনিট সৃষ্টিপূর্বক সেগুলিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির স্থানীয় শাখার সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমে ঋণদান ও আদায় কার্যক্রম চালানো হয়। গ্রামীণ প্রকল্পটিকে গ্রামীণ ব্যাংক নামকরণ করে একটি বিশেষায়িত ঋণদান প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শুরুতে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১০০ মিলিয়ন ও ৩০ মিলিয়ন টাকা। ব্যাংকের মূলধন প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যের সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত। এর মোট পরিশোধিত মূলধনের ৪০% ব্যাংকটির ঋণগ্রহীতাগণ এবং অবশিষ্ট ৬০% বাংলাদেশ সরকার ও সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিশোধ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ক্রমান্বয়ে এর কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করা হয়। ফলে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৫০০ মিলিয়ন ও ৩৫৮মিলিয়ন টাকা। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের ৩.৩৫% বাংলাদেশ সরকার, ০.৮৪% সোনালী ব্যাংক, ০.৮৪% বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং ৯৪.৯৭% ঋণগ্রহীতাগণ কর্তৃক পরিশোধিত। ঋণ গ্রহীতাদের পরিশোধিত অংশ তথা ৯৪.৯৭% এর মধ্যে ৪.২৩% পুরুষ ঋণগ্রাহক এবং ৯০.৭৪% মহিলা ঋণগ্রাহকগণ কর্তৃক পরিশোধিত।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভূমিহীন দরিদ্র জনগণকে আয় সৃষ্টিকারী ও জীবিকানির্ভর নানাবিধ কাজের জন্য নগদ অর্থ অথবা উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে জামানতবিহীন ঋণদান করাই গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কাজ। এ ছাড়া, ব্যাংকটি আমানত গ্রহণ করে এবং ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নিজস্ব সমঙদ জামানত রেখে বা অন্যান্য উপায়ে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে। তবে এটি বৈদেশিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করে না। ব্যাংকটি সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়সহ ক্ষুদ্র ব্যবসায় ও শিল্পে বিনিয়োগ করার জন্য এর গ্রাহকদেরকে পেশাগত ও কারিগরি পরামর্শসেবা প্রদান করে। এতদ্ব্যতীত গ্রামীণ ব্যাংক আয়সৃষ্টিকারী কাজ ও ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ এবং সেগুলির স্থায়িত্ব ও সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করে।
আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সুবিধা পাওয়া একটি মানবিক অধিকার- এ নীতির ভিত্তিতে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রচলিত ব্যাংকিং-এ জনগণকে ঋণ গ্রহণের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয়, অর্থাৎ ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিকে সশরীরে ব্যাংকে হাজির হতে হয়। কিন্তু গ্রাহকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ তহবিল নিয়ে তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর নীতির ভিত্তিতে তার ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক পল্লী অঞ্চলের ভূমিহীন ও অশিক্ষিত নারীদেরকে নিজস্ব ব্যবসায়, অন্যান্য আয়সৃষ্টি ও আয়বর্ধক কার্যাবলি হাতে নেওয়া ও চালানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এতে দরিদ্র মহিলারা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে কিছুটা স্বাধীনতা, আত্মনির্ভরশীলতা, আত্মমর্যাদা এবং সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষমতা লাভ করে। বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণের গ্রামীণ মডেল বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশসহ আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি এবং ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ/হ্রাসে ব্যবহূত হচ্ছে। ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ ও আদায়ের পদ্ধতি দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য একটি কার্যকর ও ফলপ্রসু মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি স্বরূপ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছে।
গ্রামীণ ব্যাংক দলভিত্তিকভাবে গ্রাহকদের ঋণ প্রদান করে। ঋণ পরিশোধের জন্য একটি দলের সদস্যগণের যৌথ দায়িত্ব থাকলেও ঐ দলের প্রত্যেক ঋণগ্রহীতা তার গৃহীত ঋণ ও অগ্রিমের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকে। তবে দলের কোন একজন সদস্যের গৃহীত ঋণ পরিশোধের জন্য অন্যান্য সদস্যগণের অনানুষ্ঠানিক দায়িত্ব রয়েছে। ষোলটি মূলনীতির ভিত্তিতে ব্যাংকটি এর সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং ঋণ প্রদান কার্যক্রম চালায়। একটি ঋণগ্রহীতা দলের সকল সদস্যকে ব্যক্তিগতভাবে ঐ ষোলনীতি নিরিখ মুখস্ত, হূদয়ঙ্গম এবং অনুসরণ করতে হয়। কেননা এ নিরিখগুলি তাদেরকে শৃঙ্খলা ও একতা শিক্ষা দেয় এবং উদ্দীপনা, উন্নয়ন ভাবনা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ সকল নিরিখ গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যগণকে নিজ নিজ পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য, জীর্ণশীর্ণ বাড়িতে বসবাস না-করে নিজস্ব বাড়ি তৈরি ও মেরামত করা, বছরব্যাপী শাকসব্জি উৎপাদন, খাওয়া ও বিক্রয়, গাছ লাগানো, পরিবার ছোট রাখা, খরচ কমানো ও সঞ্চয় বৃদ্ধি করা, নিজ স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, পরিবেশকে দূষণমূক্ত রাখা, স্বাস্থ্যসম্মত গভীর পায়খানা তৈরি ও ব্যবহার, আর্সেনিকমুক্ত নলকূপের অথবা সিদ্ধ পানি পান করা, বাল্যবিবাহ পরিহার, যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া পরিত্যাগ করা, অন্যের প্রতি অন্যায় অবিচার করা থেকে বিরত থাকা, সমষ্টিগত ও বৃহৎ বিনিয়োগ হাতে নেওয়া, পারস্পরিক সহযোগিতার নীতি অনুসরণ করা, কোন সদস্য কর্তৃক নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হলে তা পুনঃস্থাপন করা, প্রতি কেন্দ্রে শৃঙ্খলার ব্যবস্থা করা এবং সর্বপ্রকার সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার শিক্ষা প্রদান করে। প্রক্রিয়াকরণ ও উৎপাদন, কৃষি ও বনায়ন, সেবা খাত, ব্যবসায়, রিকশা ও রিকশাভ্যান চালানো, মুদি মালের ব্যবসায় ইত্যাদি কাজের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ প্রদান করে। এ সকল প্রধান খাতের অধীনে অসংখ্য আয়বর্ধনকারী কাজের জন্যও ব্যাংকটি ঋণসুবিধা দিয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকার আমানত লেনদেনের মাধ্যমে ব্যাংকটি ঋণগ্রহিতা সদস্য ও সদস্য বহির্ভূতদের নিকট হতে আমানত সংগ্রহ করে। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখ পর্যন্ত দেশের প্রায় সকল উপজেলাতে গ্রামীণ ব্যাংকের মোট ২,৫৩৯টি শাখা কাজ করছিল। এর শাখাগুলি সারাদেশে ব্যাংকটির মোট ৪০টি যোনাল এবং ২৬৪টি এরিয়া অফিসের অধীনে কাজ করে। উল্লিখিত তারিখ পর্যন্ত ব্যাংকটি দেশের ৮৩,৫৬৬টি গ্রামে মোট ৭৬,৭০,২০৩ জন সদস্যকে ঋণসুবিধা প্রদান করেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০০৮ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪১৮.৯০ বিলিয়ন টাকা। একই তারিখ পর্যন্ত এ ব্যাংকের সঞ্চয়ের ব্যালেন্স ছিল ৬৪.১৮ বিলিয়ন টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির ঋণ আদায়হার প্রায় ৯৮%।
গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৪ সালে গৃহায়ণ ঋণ স্কিম চালু করে। টিনের চালাবিশিষ্ট একটি ঘর নির্মাণের জন্য একজন সদস্য গৃহায়ন ঋণ তহবিলের আওতায় ৮% হার সুদে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে পারে। উক্ত গৃহায়ণ ঋণগ্রহীতা সদস্যগণকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে সর্বোচ্চ ৫বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। স্কিমের আওতায় প্রদত্ত ৮.৭২ বিলিয়ন টাকা ঋণের মাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত ব্যাংকটির সদস্যগণ ৬৬৫,৫৬৮টি গৃহ নির্মাণ করেছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ সেবা ইজারা প্রদান সংক্রান্ত একটি বিশেষ কার্যক্রম চালু রয়েছে এবং এর অধীনে গ্রামীণ জনসাধারণকে সহজে টেলিযোগাযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ ফোন ব্যবস্থা চালু করেছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত ব্যাংকটি তার সকল যোনের প্রায় সকল শাখার মাধ্যমে মোট ৩৫৩,৯০৯টি ফোন বিতরণ করেছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিলের প্রধান উৎসগুলির মধ্যে শেয়ার মূলধন, সাধারণ ও অন্যান্য সঞ্চিতি, ব্যাংক কর্তৃক রক্ষিত কিছু বিশেষ তহবিল, সদস্যদের আমানত ও অন্যান্য তহবিলের স্থিতি এবং ব্যাংক ও অন্যান্য বৈদেশিক উৎস থেকে গৃহীত ঋণ উল্লেখযোগ্য। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত ব্যাংকটির গৃহীত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১.৬৪ বিলিয়ন টাকা এবং তা বাংলাদেশ ব্যাংক, ইফাদ, নোরাড, সুইডিশ সিডা, ফোর্ড ফাউন্ডেশন, ডাচ্ গ্রান্টলোন, ভিআইসি সেঙন এবং ওইসিইএফ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের জিম্মায় বন্ড ও ডিবেঞ্চার ইস্যুর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। এ সকল বন্ড ডিবেঞ্চারের ওপর প্রদত্ত সুদের হার ছিল ৪% থেকে ১০% এর মধ্যে।
শুরু থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির নীট মুনাফার টাকা পুনর্বাসন তহবিলে স্থানান্তর করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে পুনর্বাসন তহবিলের ব্যালেন্স দাঁড়িয়েছে ১.৯৮ বিলিয়ন টাকা। ২০০৬ সাল হতে বিগত ৩ বছর যাবৎ নীট মুনাফার অংশ শেয়ার গ্রহিতারদেরকে বন্টন করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে এ ব্যাংকের মোট পরিসম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৮২.৮০ বিলিয়ন টাকা।
দারিদ্র্য দূরীকরণ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এ ব্যাংকটি সমঙ্রসারিত ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে ভূমিহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাদের আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষায়িত ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈশিষ্ট্যাবলির মধ্যে উচ্চহারে ঋণ আদায়, ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, দলের সদস্যগণকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য দলের সদস্যগণ কর্তৃক উদ্বুদ্ধকরণ, নিজস্ব মাঠকর্মী এবং গৃহীত ঋণের যথাযথ ব্যবহার ও ঋণ পরিশোধ-প্রক্রিয়া সরাসরি তত্ত্বাবধান, পরামর্শ-সেবা প্রদান ও নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি সবিশেষ গুরুত্বপুর্ণ।
সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত একজন চেয়ারম্যানসহ ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদ গ্রামীণ ব্যাংকের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। চেয়ারম্যান ব্যতীত ১২ জন পরিচালকের মধ্যে ৯ জন ব্যাংকটির দেশব্যাপী অসংখ্য কেন্দ্রের মহিলা সদস্যগণ কর্তৃক মনোনীত হয়। ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে ৮/১২টি বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে এবং এগুলি হচ্ছে কেন্দ্রীয় হিসাব, প্রশাসন, সংস্থাপন, প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাাতিক কর্মসূচি, অবলোকন ও মূল্যায়ন, সার্ভিসেস, নিরীক্ষণ, সমন্বয় ও পরিচালনা-পূর্বাঞ্চল, সমন্বয় ও পরিচালনা-পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ, গ্রামীণ ব্যাংক সচিবালয় এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সচিবালয়। এছাড়া প্রযুক্তি ও উন্নয়ন, নির্মাণ, বিশেষ কর্মসূচি এবং পরিকল্পনা শাখা প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।
[আবুল কালাম আজাদ - বাংলাপিডিয়া]