পৃথিবীতে অনেক রহস্যময় জায়গা বা স্থাপনা আছে- যা মানুষকে আজও আকর্ষণ করে। এসব স্থান বা স্থাপনার রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য। তেমনই রহস্যময় একটি স্থাপনার নাম নিউপোর্ট টাওয়ার। এর আরও কয়েকটি নাম আছে- রাউন্ড টাওয়ার, নিউপোর্ট স্টোন টাওয়ার বা ওল্ড স্টোন মিল। গোলাকার আকৃতির প্রাচীন এই টাওয়ারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোদ দ্বীপের নিউপোর্ট এলাকার টাউরো পার্কে অবস্থিত। এ টাওয়ারটি সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি। এটি নির্মাণ করা হয় ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। উত্তর-দক্ষিণ দিক থেকে এর ব্যাস ২২ ফুট ২ ইঞ্চি এবং পূর্ব-পশ্চিম দিক থেকে ২৩ ফুট ৩ ইঞ্চি। উচ্চতা মোট ২৮ ফুট। একসময় এ টাওয়ারের দেয়ালগুলো সাদা প্লাস্টার করা ছিল। এখনও বাইরের দেয়ালে তার কিছু নমুনা দেখা যায়। টাওয়ারটি আটটি কলামের উপর দাঁড়িয়ে আছে। যার মধ্যে দুটি কলাম অন্য ছয়টি কলামের চেয়ে আকারে বড়। কলামগুলোর গায়ে দাগ কেটে আঁকা হয়েছে নানা প্রজাতির প্রাণীর ছবি, নাম ও আরও অনেক কিছু। টাওয়ারের দেয়ালগুলো শক্ত ও পুরু করে তৈরি করা। এর প্রতিটি দেয়াল ৩ ফুট পুরু। টাওয়ারটির অভ্যন্তরের ব্যস প্রায় ১৮ ফুট। এ টাওয়ারে মোট ৭টি জানালা আছে। যার মধ্যে টাওয়ারের অভ্যন্তরে রয়েছে চারটি এবং এর উপরের স্তরে রয়েছে ছোট আরও তিনটি জানালা । এই টাওয়ারের পাশে ছোট-বড় আরও কিছু টাওয়ার রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা হয়েছে। তথ্য মতে ১৭৪১ সালে এ টাওয়ারটি ব্যবহৃত হত পাথরের মিল হিসেবে। ১৭৬৭ সালে এটি পাউডারের মিল হিসেবে ব্যবহার করা হত এবং আমেরিকান বিপ্লবের সময় এই টাওয়ারকে বানানো হয়েছিল ক্যাম্প ও ওয়াচ টাওয়ার। আমেরিকান বিপ্লবের পর থেকে এই টাওয়ারকে রহস্যময় টাওয়ার বলা হয়। জিম ব্রানডন নামের একজন আমেরিকান গবেষক ও প্রকৌশলী নিউপোর্ট টাওয়ারকে কেন রহস্যজনক টাওয়ার বলা হয় এর কারণ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রাচীন এই টাওয়ারের নানা উপকরণ, লেখা, কারুকাজ নিয়ে প্রায় এক বছর গবেষণা করে দেখেছেন, নিউপোর্ট টাওয়ারটি যে পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তা প্রাচীন চুম্বক জাতীয় পাথর। এই চুম্বক জাতীয় পাথরের গায়ে রয়েছে চৌম্বক ক্ষমতা যা সহজেই লৌহ জাতীয় পদার্থকে আকৃষ্ট করতে পারে। ম্যাগনেট ছাড়াও টাওয়ারের ৩য় ও ৪র্থ তলায় পাওয়া গেছে মানুষের পায়ের চিহ্ন, প্রাচীন নকশা, মানুষের মাথার খুলি। এ সব থেকে অনুমান করা হয়, প্রাচীনকালে বা আমেরিকান বিপ্লবের সময় এই টাওয়ারটিতে মানুষ হত্যা করা হত। অপরাধীকে এখানেই ফাঁসিতে ঝুলানো হত। ১৯৪৬ সালে অধ্যাপক পি লভফোল্ড নামের একজন গবেষক সুইডেন ও নরওয়েতে ১৪ ফুট উচ্চতার একই ধরনের টাওয়ারের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। আবার স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড দ্বীপেও সন্ধান পাওয়া গেছে একই ধরনের টাওয়ার। যার মধ্যে স্কটল্যান্ডের টাওয়ারটি তৈরি করা হয়েছিল ১১১৫ সালে এবং নেদারল্যান্ডেরটি তৈরি করা হয়েছিল ১১৬০ সালে। নিউপোর্ট টাওয়ারের সঙ্গে এই টাওয়ারগুলোর মিল আছে। পৃথিবী ব্যাপী একই ধরনের টাওয়ার কী কারণে প াচীনকালে তৈরি করা হয়েছিল সে ব্যাপারে গবেষকদের মাঝে রহস্যের সৃষ্টি করেছে। অতি উৎসাহী অনেকে বলে থাকেন গভীর রাতে নিউপোর্টে কান পেতে থাকলে শোনা যায় দূর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।
মার্কিন নিউপোর্ট টাওয়ারটি তৈরি করেন রোদ দ্বীপের প্রথম গভর্নর বেনেডিক্ট আর্নল্ড। ব্রিটিশ পেনি ম্যাগাজিন ১৮৩৬ সালে বর্ণনা করে নিউপোর্ট টাওয়ারের মতো একই ধরনের একটি টাওয়ার ইংল্যান্ডের চেস্টারটনে আছে। বেনিডিক্ট জন্মগ্রহণ করেন লিমিংটন শহরে। শহরটি চেষ্টারটনের নিকটে। ফলে তিনি ওই টাওয়ারের অনুকরণে এই টাওয়ারটি সহজে নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। তিনি এটি তৈরি করেছিলেন মূলত পাথরের মিল হিসেবে ব্যবহারের জন্য।
নিউপোর্ট টাওয়ারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন একটি স্থাপনা। ফলে এই স্থাপনাকে ঘিরে মার্কিনদের রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। আর একই ধরনের স্থাপনা বিশ্বের কয়েকটি স্থানে থাকার কারণে অনেকে এটিকে রহস্যময় কিছু মনে করেন।। তবে এই স্থাপনাকে কেন্দ্র করে কোনও রহস্য আছে কিনা সেটা শুধুই অনুমান নির্ভর। হয়তো এমন হতে পারে সে সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই অনুকরণে পাথরের মিল তৈরি করা হয়েছিল। যেটা শুধুই কাকতালীয়- কোনো রহস্য নয়।