গ্রিনল্যান্ডের গিরিখাত: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গিরিখাত

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গিরিখাদ বা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন কোনটি? এতদিন জানা ছিল আমেরিকার কলোরাডো নদীর খোদাই করা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। কদিন আগে আবিস্কৃত হয়েছে এর চেয়েও বড় এক গিরিখাদ। তবে সেটা আমেরিকায় নয়, গ্রিনল্যান্ডে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ হচ্ছে গ্রিনল্যান্ড। তবে জনবসতি একেবারেই কম। মাত্র ৫৬ হাজার মানুষ বাস করে। দ্বীপের চার ভাগের তিন ভাগই বরফের তলায়। এস্কিমোরাই ওখানকার মূল বাসিন্দা। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে কানাডা থেকে অভিবাসিত হয়ে তারা গ্রিনল্যান্ডে গিয়েছে। দশম শতাব্দীতে নর্সরা আর তের শতাব্দীতে ইনুইটরা ওখানে আস্তানা গাড়ে। তবে পনের শতকের দিকে নর্সরা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় ওই এলাকা থেকে। সে যাই হোক, যে দ্বীপের তিন চতুর্থাংশ বরফের তলায়, সে দ্বীপের অনেক কিছুই যে এখনও অজানা থাকবে- এ আর নতুন কী! কিন্তু অজানাকে জানাই হল মানুষের ধর্ম। অজানাকে জানার জন্য দিন দিন উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। আর এই প্রযুক্তির কল্যাণেই জানা গেছে গ্রিনল্যান্ডের বরফের তলায় থাকা বিশাল এক গিরিখাদের কথা।

বিখ্যাত সায়েন্স জার্নালেই ক’দিন আগে জানানো হয় ওই আবিষ্কারের কথা। ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের ভূগোলবিদ জনাথন ব্যাম্বার এ নিয়ে গবেষণা করছেন বেশ কিছুদিন।

এই বিশাল খাদটি শুরু হয়েছে মধ্য গ্রিনল্যান্ডের সবচাইতে উঁচু স্থান, Summit থেকে এবং এর থেকে উত্তরদিকে প্রসারিত হয়েছে উত্তর-পশ্চিম উপকূলের পিটারম্যান হিমবাহ পর্যন্ত। এর দৈর্ঘ্য ৪৬০ কিলোমিটারেরও বেশি। দৈর্ঘ্য আরও বেশি হতে পারে কিন্তু বরফের নিচে এটা কোনদিকে গেছে সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। ব্যাম্বারের মতে এটা আরো দক্ষিণে প্রসারিত হতে পারে।

এই বিশাল গহবরের গভীরতা ২,৬০০ ফুট এবং এর প্রস্থ ৬ মাইল। আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সঙ্গে এর গঠনের মিল আছে। এর গঠন থেকে এটাও নিশ্চিত হওয়া যায় যে বরফ নয়, বরং পানি চলাচলের ফলেই এর সৃষ্টি। এটি পৃথিবীর সবচাইতে গভীর গিরিখাদ না হলেও নিঃসন্দেহে এটি দৈর্ঘ্যে সবচাইতে বড়। কী আছে এই রহস্যময় গিরিখাদে? গবেষকরা বোঝার চেষ্টা করছেন গ্রিনল্যান্ডের ভেতরের বরফ গলা পানিগুলো কোথায় যায়? গ্রিনল্যান্ড এর স্থলভাগটি অনেকটা বাটির মতো, ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া। কিন্তু গলে যাওয়া বরফ ভেতরের দিকে না গিয়ে বরং বাইরের সাগরেই এসে পড়ে। ব্যাম্বার এবং তার সহকর্মীরা মনে করছেন এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন দিয়ে কিছু পানি প্রবাহিত হয়ে বাইরে চলে আসে।
বর্তমানে বরফে পূর্ণ এই প্রণালী দিয়ে পানি চলাচল না করলেও, তারা মনে করছেন এই বরফ গলে গেলে পানি প্রবাহিত হতে পারে। এছাড়া এই ক্যানিয়ন দিয়ে পানি এসে পড়ে পিটারম্যান হিমবাহে এবং বিগত কয়েক বছরে এই হিমবাহটি থেকে দুইটি বড় হিমশৈল ভেঙে পড়েছে। আকারে একেকটা হিমশৈল শহরের মতো বড়। এই হিমবাহটিকে ভাঙার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।

এই ক্যানিয়নের বিবর্তন এবং বর্তমানের বরফস্তরের ওপর এর কি প্রভাব আছে তা জানতে আরও অনেক কাজ করতে হবে বলে জানালেন এর আরেক গবেষক ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের হিমবাহবিদ মারটিন সিগারট।

গত কয়েক দশক ধরে নাসা এবং ইংল্যান্ড ও জার্মানির গবেষকরা এসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বিশেষ কিছু কম্পাংকের রেডিও তরঙ্গ বরফের মাঝে দিয়ে চলাচল করতে পারে কিন্তু পাথরে ধাক্কা খেয়ে প্রতিফলিত হয়। এ থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভর করেই খোঁজ মেলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই গিরিখাতের।