Magnetic Hill |
কেমন হয় বলুন তো, যদি আপনার গাড়িটি এমনি রেখে দিলেন আর তা নিজে নিজে গড় গড় করে বিনা বাধায় ২০০ গজ মতো উপরে উঠে গেল! কী হতে পারে, জাদু না রহস্য? কি বিশ্বাস হচ্ছে না? পুরো ঘটনা কিন্তু পুরোপুরি সত্য। এমন ঘটনা ঘটে আমরা কথা বলছি মনকটন শহরের উত্তরে অবস্থিত চুম্বক পাহাড় বা ম্যাগনেটিক হিলে। পাহাড়টি কানাডার নিউ বার্নসউইক প্রদেশে অবস্থিত। এই পাহাড়ের নিচে কোনো গাড়ি রাখলে তা নিজে নিজে উপরে উঠে যায়।
Spook Hill |
রহস্যের শুরু ১৮৮০ সালে। যখন ছোটখাটো ওয়াগনগুলো এমনি ওপরে উঠে যেত। ১৯৩৩ সালে খবরটি প্রথম ছাপা হল স্থানীয় সিন্ট জন টেলিগ্রাফ জার্নালে। রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামলেন বিশেষজ্ঞরা। মনকটন শহরের প্রতিটি পাহাড়ে চলল অনুসন্ধান। পেরিয়ে গেল পাঁচ পাঁচটি ঘণ্টা কিন্তু কোনো ফলাফল নেই। শেষমেশ একেবারে বাড়ি যাওয়ার পথে দেখা গেল বিস্ময়কর কাণ্ড। নির্দিষ্ট একটি জায়গায় তাদের গাড়িটা বিনা বাধায় পাহাড়ের উচ্চভাগের দিকে উঠে গেল। চোখ পড়ল রাস্তার পাশের পানির উৎসটার দিকে। মাধ্যকার্ষণ নীতি অমান্য করে সেটাও বয়ে চলেছে ওপরের দিকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকার চুম্বক পাহাড়কে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরিত করলেন। আজকাল অবশ্য এর আশপাশে গলফ কোর্স, চিড়িয়াখানা, রেলওয়েসহ অনেকই কিছুই গড়ে উঠেছে। ২০০২ সালে ম্যাগনেটিক হিল পার্ক জিতে নেয় কানাডার সেরা আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানের পুরস্কার। এখন এই পাহাড়ের রহস্য উপভোগ করতে আপনাকে কিছু খরচ করতে হবে। তারপর আপনার গাড়িটাকে ওই স্থানটাতে রেখে দিন এবং দেখুন কী হয়! আপনার গাড়িটি পাহাড়ের নিচ থেকে নিজে নিজে উঠে যাবে পাহাড়ের উপরে। রাস্তার পাশের ড্রেনের পানির দিকে নজর দিতে ভুলবেন না কিন্তু। দেখবেন পানিও বয়ে চলেছে উপরের দিকে। এই রকম আরেকটি পাহাড় হল ফ্লোরিডার লেক ওয়ালসের স্পুক হিল। বিশ-ত্রিশ লাখ বছর আগে এটি ছিল একটি দ্বীপ। আর আজ স্পুক হিল দুনিয়ার অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এসে ভিড় করেন এখানে। এখানে এলে প্রথমেই আপনার চোখ পড়বে পথের ধারের সাইনবোর্ডটির দিকে। এতে লেখা আছে এক অদ্ভুত উপকথা। লেক ওয়ালস একটি ইন্ডিয়ান গ্রাম। বহু বছর আগে এই গ্রামে প্রচণ্ড উপদ্রব ছিল গ্যাটার দস্যুদের। গ্রামের প্রধান ছিলেন একজন যোদ্ধা। যুদ্ধে দস্যুদের মেরে ফেললেন তিনি। যা থেকে জন্ম নিল একটি ছোট্ট লেক। লেকের উত্তর পাশে দাফন করা হয়েছিল সেই মহান যোদ্ধার মৃতদেহ।
তখনকার দিনে চিঠিপত্র আনা-নেওয়া করার পথে রানারদের নজরে পড়ল প্রথম এই ব্যাপারটি। তাদের ঘোড়াগুলোকে উপর থেকে নিচে নামার পথে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কী যেন ঘোড়াগুলোকে উপরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সেই থেকে জায়গাটির নাম হয়ে গেল স্পুক হিল। যার বাংলা অর্থ ভুতুড়ে পাহাড়। অনেকে বলে আজও সেই দস্যুরা প্রতিশোধ নেয়ার রাস্তা খুঁজছে এবং সেই যোদ্ধা এখনও লড়াই করে চলেছেন।