পাত্র বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী। ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত আর.এন নাথ লিখিত Backgraound of Assamese Culture গ্রন্থে আদিবাসী পাত্রদের ‘চুটিয়া’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই জাতির প্রকৃত নাম ‘লালেং’ যার অর্থ ‘পাথর’। তারা কোথাও কোথাও ‘পাতর’ বা ‘পাথর’ হিসেবে পরিচিত। পাত্র সমাজ ১২টি গোত্রে বিভক্ত এবং প্রতিটি গোত্রই সমমর্যাদার।
১৯৭১ সালে পাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতের আসাম, মেঘালয় এবং কাছাড়ে অভিবাসন করে। বর্তমানে সিলেটের ১৯টি গ্রামে মোট ৪০২টি পাত্র পরিবার রয়েছে এবং সেখানে পাত্র সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩,০০০। আদিবাসী পাত্র সম্প্রদায়ের মধ্যে নারী-পুরুষ সংখ্যার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পাত্র সমাজে মোট জনসংখ্যার ৫৪.১১% পুরুষ এবং ৪৫.৮৯% নারী। আর পাত্রদের পরিবারের সদস্য সংখ্যার গড় ৪.৮৬ জন। আদিতে পাত্র সম্প্রদায় ছিল সর্বপ্রাণবাদী এবং পরবর্তীকালে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। পাত্রদের মধ্যে কালী, বিষহরী (মনসা), লক্ষমী ও সরস্বতী দেবীর পূজা প্রচলিত রয়েছে, তবে পাত্র সম্প্রদায়ের গৃহে কোন দেবদেবীর মূর্তি থাকে না। পাত্রদের দেব দেবীর পূজার ধরনটাও কম বেশি একই ধরনের। যেমন সব দেব দেবীর পূজার জন্য পাঁঠা, জোড়া কবুতর, চিতল মাছ, রুই মাছ বা গজার মাছ, কড় বা ভাতের তৈরি হাঁড়িয়া, পান, সুপারি. ধুপ, নারিকেল, চিনি বা গুড়, কলা, বিভিন্ন ধরনের উৎপাদিত ফসলাদি প্রয়োজন হয়। কোনো কোনো পূজায় সমাজকে খাওয়াতে হয় আবার কোনো কোনটিতে শুধু দেব দেবীকই নৈবৈদ্য উৎসর্গ করা হয়।
পুইন (দূর্গা) পূজা সর্বজনীনভাবে করা হলেও অনেক পরিবার নিজ নিজ বাড়ীতে এই পূজা করে। পুইলুংনং (বিষহরী) পূজা মূলত মানত পূজা। যারা মানত করেন তারা বাংলা শ্রাবণ মাসে মনসা দেবীর উদ্দেশ্য নিবেদন করে থাকেন। কর্তাইন (কার্তিক ও গনেশ দুই ভাই) পূজা কার্তিক ও গনেশের উদ্দেশ্যে করা হয়। মলমথংয়াং মহাদেব বা শিবের পূজা তারা করা থাকেন। ইকওইন (কালী) পূজা মূলত কালী পূজা।
পাত্রদের মধ্যে পূর্বে কর্ণবেধ প্রথা ছিল বলে জানা যায়। আট-দশ বছর বয়সের প্রত্যেক ছেলের কানের লতি গাছের কাঁটা দিয়ে ফোঁড়ানো হতো। এরূপ কর্ণবেধ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান হতো। এ অনুষ্ঠানকে পাত্ররা পুরুষদের শুদ্ধিকরণ অনুষ্ঠান বলে। পূর্বে কর্ণবেধ বাদে কোনো পুরুষ বিয়ে করতে পারতো না। বিয়ের আগে কোনো পুরুষের কান ছিদ্র না করা থাকলে বিয়ের দিন কাঁটা দিয়ে বরের কান ছিদ্র করা হতো।
পাত্রদের মধ্যে চাচাতো, মামাতো, পিসতুতো কিংবা মাসতুতো ভাইবোনসহ নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে চলে না। এমনকি ‘সীতকই’ বিয়ের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। পাত্রদের মধ্যে দুই ধরনের বিবাহ প্রথা রয়েছে, যথা ‘সীতকই’ ও ‘সাত পাকে বাধা’ বা ‘সাব্যস্ত বিয়ে’ ‘সীতকই’ বিয়ে হলো বলপূর্বক বিবাহ যা ‘ছাইভস্ম’ বিবাহ হিসেবেও পরিচিত। একে পাত্ররা মর্যাদাহীন বিয়ে হিসেবে মনে করেন। আর সাব্যস্ত বিয়েতে বাসর রাতের সন্ধ্যায় বরের পূর্ব পুরুষদের নামে ভোগ দিয়ে মন্ত্রের মাধ্যমে তাদের আহবান করে কনেকে তাদের বংশের নতুন বউ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
পাত্রদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক আচার-অনুষ্ঠান ও ক্রিয়াকর্মের মধ্যে তাদের আদি বিশ্বাস ও হিন্দু ধর্মের সমন্বিত রূপ লক্ষ্য করা যায়। জন্ম ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাদের রয়েছে বিস্তৃত আচার-অনুষ্ঠান। এসব আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে আদিবাসীদের বিশ্বাস ও হিন্দুধর্মীয় বিশ্বাসের বিভিন্ন উপাদান উপস্থিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো জাতকের জন্ম নিয়ে পাত্রদের বিস্তৃত আচার-অনুষ্ঠান নেই, তবে পারলৌকিক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে তাদের আচার-অনুষ্ঠান বেশ বিস্তৃত।
পাত্র সম্প্রদায় সম্পূর্ণরূপে পিতৃতান্ত্রিক। সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পিতৃতান্ত্রিক নিয়ম সমানভাবে প্রযোজ্য এবং বাংলাদেশের হিন্দু সমাজের নিয়মানুযায়ী কেবল ছেলে উত্তরাধিকারসূত্রে পিতার সম্পত্তি পায়। পিতার সম্পত্তিতে কন্যাসন্তানের কোন অধিকার পাত্র সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বীকৃত নয়। কোন ব্যক্তির পুত্রসন্তান না থাকলে ঐ ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকার লাভ করে তার ভাই বা ভাইয়ের ছেলেরা।
১৯৭১ সালে পাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতের আসাম, মেঘালয় এবং কাছাড়ে অভিবাসন করে। বর্তমানে সিলেটের ১৯টি গ্রামে মোট ৪০২টি পাত্র পরিবার রয়েছে এবং সেখানে পাত্র সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩,০০০। আদিবাসী পাত্র সম্প্রদায়ের মধ্যে নারী-পুরুষ সংখ্যার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পাত্র সমাজে মোট জনসংখ্যার ৫৪.১১% পুরুষ এবং ৪৫.৮৯% নারী। আর পাত্রদের পরিবারের সদস্য সংখ্যার গড় ৪.৮৬ জন। আদিতে পাত্র সম্প্রদায় ছিল সর্বপ্রাণবাদী এবং পরবর্তীকালে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। পাত্রদের মধ্যে কালী, বিষহরী (মনসা), লক্ষমী ও সরস্বতী দেবীর পূজা প্রচলিত রয়েছে, তবে পাত্র সম্প্রদায়ের গৃহে কোন দেবদেবীর মূর্তি থাকে না। পাত্রদের দেব দেবীর পূজার ধরনটাও কম বেশি একই ধরনের। যেমন সব দেব দেবীর পূজার জন্য পাঁঠা, জোড়া কবুতর, চিতল মাছ, রুই মাছ বা গজার মাছ, কড় বা ভাতের তৈরি হাঁড়িয়া, পান, সুপারি. ধুপ, নারিকেল, চিনি বা গুড়, কলা, বিভিন্ন ধরনের উৎপাদিত ফসলাদি প্রয়োজন হয়। কোনো কোনো পূজায় সমাজকে খাওয়াতে হয় আবার কোনো কোনটিতে শুধু দেব দেবীকই নৈবৈদ্য উৎসর্গ করা হয়।
পুইন (দূর্গা) পূজা সর্বজনীনভাবে করা হলেও অনেক পরিবার নিজ নিজ বাড়ীতে এই পূজা করে। পুইলুংনং (বিষহরী) পূজা মূলত মানত পূজা। যারা মানত করেন তারা বাংলা শ্রাবণ মাসে মনসা দেবীর উদ্দেশ্য নিবেদন করে থাকেন। কর্তাইন (কার্তিক ও গনেশ দুই ভাই) পূজা কার্তিক ও গনেশের উদ্দেশ্যে করা হয়। মলমথংয়াং মহাদেব বা শিবের পূজা তারা করা থাকেন। ইকওইন (কালী) পূজা মূলত কালী পূজা।
পাত্রদের মধ্যে পূর্বে কর্ণবেধ প্রথা ছিল বলে জানা যায়। আট-দশ বছর বয়সের প্রত্যেক ছেলের কানের লতি গাছের কাঁটা দিয়ে ফোঁড়ানো হতো। এরূপ কর্ণবেধ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান হতো। এ অনুষ্ঠানকে পাত্ররা পুরুষদের শুদ্ধিকরণ অনুষ্ঠান বলে। পূর্বে কর্ণবেধ বাদে কোনো পুরুষ বিয়ে করতে পারতো না। বিয়ের আগে কোনো পুরুষের কান ছিদ্র না করা থাকলে বিয়ের দিন কাঁটা দিয়ে বরের কান ছিদ্র করা হতো।
পাত্রদের মধ্যে চাচাতো, মামাতো, পিসতুতো কিংবা মাসতুতো ভাইবোনসহ নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে চলে না। এমনকি ‘সীতকই’ বিয়ের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। পাত্রদের মধ্যে দুই ধরনের বিবাহ প্রথা রয়েছে, যথা ‘সীতকই’ ও ‘সাত পাকে বাধা’ বা ‘সাব্যস্ত বিয়ে’ ‘সীতকই’ বিয়ে হলো বলপূর্বক বিবাহ যা ‘ছাইভস্ম’ বিবাহ হিসেবেও পরিচিত। একে পাত্ররা মর্যাদাহীন বিয়ে হিসেবে মনে করেন। আর সাব্যস্ত বিয়েতে বাসর রাতের সন্ধ্যায় বরের পূর্ব পুরুষদের নামে ভোগ দিয়ে মন্ত্রের মাধ্যমে তাদের আহবান করে কনেকে তাদের বংশের নতুন বউ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
পাত্রদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক আচার-অনুষ্ঠান ও ক্রিয়াকর্মের মধ্যে তাদের আদি বিশ্বাস ও হিন্দু ধর্মের সমন্বিত রূপ লক্ষ্য করা যায়। জন্ম ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাদের রয়েছে বিস্তৃত আচার-অনুষ্ঠান। এসব আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে আদিবাসীদের বিশ্বাস ও হিন্দুধর্মীয় বিশ্বাসের বিভিন্ন উপাদান উপস্থিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো জাতকের জন্ম নিয়ে পাত্রদের বিস্তৃত আচার-অনুষ্ঠান নেই, তবে পারলৌকিক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে তাদের আচার-অনুষ্ঠান বেশ বিস্তৃত।
পাত্র সম্প্রদায় সম্পূর্ণরূপে পিতৃতান্ত্রিক। সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পিতৃতান্ত্রিক নিয়ম সমানভাবে প্রযোজ্য এবং বাংলাদেশের হিন্দু সমাজের নিয়মানুযায়ী কেবল ছেলে উত্তরাধিকারসূত্রে পিতার সম্পত্তি পায়। পিতার সম্পত্তিতে কন্যাসন্তানের কোন অধিকার পাত্র সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বীকৃত নয়। কোন ব্যক্তির পুত্রসন্তান না থাকলে ঐ ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকার লাভ করে তার ভাই বা ভাইয়ের ছেলেরা।
তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া