পৃথিবীতে নগরের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে নাগরিকের সংখ্যাও। কিন্তু সকল নাগরিক কি নগরের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে? পারে না। কেউ কেউ খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন আজীবন। কেউ কেউ একেবারে খাপ খাইয়ে ফেলেন নিজেকে। নগরের কাঠখোট্টা জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যান আষ্টেপৃষ্ঠে। আর কেউ কেউ নিজেকে মেলাতেই পারেন না নগর জীবনের টানাপোড়েনের সঙ্গে। নগর জীবনে কী আছে? যারা নগরে থাকেন, তাদের অনেকেই জানেন না। আর যারা থাকেন না, তারা তো জানেনই না। তবে কী নেই, এমন প্রশ্ন করলে সম্ভবত একটা জবাবই বেশি আসবে। নগর জীবনে আর যাই থাকুক আর না থাকুক, শান্তি নেই। অথচ নাগরিকদের জন্য শান্তি আনতে কতই না চেষ্টা করে যাচ্ছে রাষ্ট্র। তবু কি শান্তির সঙ্গে নাগরিকদের দেখা করিয়ে দিতে পেরেছে? হয়ত কখনও কখনও পেরেছে। কখনও পারেনি।
শান্তির জন্য কেউ আবার রাষ্ট্রের ওপর দোষ চাপাতে রাজি নয়। নগরজীবনটাই তাদের কাছে দুর্বিষহ। এই যেমন চীনের ফেং সাহেবের কথাই ধরা যাক। নগর সভ্যতার ওপর বড্ড বিরক্ত তিনি। কোনো ভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। তাই একদিন ভাবলেন গুহাবাসী হবেন। একসময় তো পৃথিবীর মানুষ গুহাতেই বাস করত। কাজেই কষ্ট হবে না। যেই ভাবা, সেই কাজ। গুহায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন। ফেং সাহেবের পুরো নাম ফেং মিংশান। আর যে গুহায় তিনি শান্তির খোঁজে আশ্রয় নিলেন, সেটি হচ্ছে চীনের দক্ষিণাঞ্চলের শানজি প্রদেশে। তিনি থাকতেন গোয়াবাডিয়ানে। গোয়াবাডিয়ান থেকে তার গুহার দূরত্ব গাড়িতে দুই ঘণ্টা। যখন তিনি বাড়ি ছেড়ে গুহায় আসেন তখন তার বয়স ছিল ৩৪ বছর। এখন ৫৪।. মাঝে বিশটি বছর কেটে গেল গুহায়। নগরের কোলাহল, হইচই, চাহিদার আর্তনাদ- সব কিছু দূরে ঠেলে বাস করছেন নির্জনে। তিনি ১৯৯৩ সালে যখন গুহায় আসেন থাকার জন্য, তখন এটি ছিল বেশ সংকীর্ণ এক গুহা। ছিল না জানালা পর্যন্ত। একটা হাতুড়ি দিয়ে ভাঙতে ভাঙতে বাড়াতে থাকেন গুহায় থাকার জায়গা। গুহার প্রবেশ মুখে দরজা বসান নিজেই। জানালাও আছে তার গুহায়। মাটি থেকে ৫০ ফুট উঁচু তার গুহাটি। চার হাত-পায়ে কসরত করে তবেই উঠতে হয় তার বর্তমান আবাসস্থানে।
গুহা থেকে খুব একটা বাইরে বেরোন না ফেং। দরকারি কিছু কাজ সারার জন্যই বাইরে আসেন। বাস করছেন একেবারে সন্ন্যাসীর মতো। এর মধ্যেই তাকে সন্নাসী উপাধি দেয়া হয়েছে। আর যে রিপোর্টার সাক্ষাৎকার নিতে যান- তার সঙ্গে কথা বলেন গুহার ভিতর থেকেই। ফেং জানান গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমেও গুহার ভেতরটা বেশ ঠাণ্ডা থাকে। কোনো কোলাহল নেই বলে একাকীত্ব উপভোগও করতে পারেন নিজের মতো। আধুনিক মানুষের মতো কোনো সুযোগ সুবিধাও নেন না তিনি। প্রায় প্রতিদিনই জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে বেরোন গুহা থেকে। আশপাশের জঙ্গল থেকেই সেটা জোগাড় হয়ে যায়। ফেংয়ের আত্মীয় পরিজনরাও তাকে আবার নাগরিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
কিন্তু ফেং সবাইকে হতাশ করে দিয়েছেন। তিনি কারো সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতে চান না। কিন্তু গুহাটার খোঁজ তিনি পেলেন কী করে? কিশোর বয়সেই নাকি একবার ঘুরতে ঘুরতে এসে পেয়ে যান গুহা। তবে বর্তমান জীবন যাপনের ব্যাপারে ফেংয়ের মতের সঙ্গে মোটেই সম্মত নয় স্থানীয় প্রশাসন। তাদের ধারণা ফেং মানসিক রোগী। তাকে যত শিগগির সম্ভব মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। নগর জীবনে অভ্যস্ত নাগরিকদের কাছে মানসিক রোগী ছাড়া তো আর কিছু নয় ফেং।