বাড়ির সামনের উঠোনে বসে মার্বেল খেলছে চার-পাঁচজন ছেলেমেয়ে। উঠোন থেকে অল্প দূরে একটি তালগাছ। গাছটার তলায় একটা টলটলে জলভরা ডোবা। ডোবাটার পাড়জুড়ে নাটাকাঁটা ঝোপের বিস্তার। প্রচণ্ড শব্দে একটি পাকা তাল পড়ল ডোবাটার জলে, অমনি ভয়ে নাটাকাঁটা ঝোপ থেকে ছিটকে বেরোল পাঁচটি প্রাণী। ছেলেমেয়েদের নজরে পড়তেই খেলা ফেলে ছুটল ওরা হইহই শব্দে। উঠোনের কুকুর তিনটিও দেখল প্রাণীগুলোকে, হাঁকডাক করে ছুটল। ভয়ে প্রাণী পাঁচটি ছুটছে দূরের বাগানটা লক্ষ্য করে একেবারে ‘জান বাঁচানো দৌড়’। কুকুর তিনটি ওদের ধরে ধরে অবস্থা যখন। তখনই পাঁচটি প্রাণীই লেজটা অল্প তুলে পশ্চাদ্দেশের গ্রন্থি থেকে স্প্রে করে দিল দুর্গন্ধযুক্ত হালকা-হলুদাভ গ্যাস, যেনবা কাঁদানে গ্যাস। দুর্গন্ধময় ঝাঁজালো গ্যাস নাকে-চোখে লাগতেই কুকুর তিনটি অন্ধ হয়ে গেল সাময়িকভাবে। এই সুযোগে প্রাণী পাঁচটি দৌড়ে গিয়ে ঢুকে পড়ল একখানা গোয়ালঘরে, মাচানে চড়েও শান্তি পেল না। ছেলেপুলেরা লাঠিসোঁটা হাতে হাজির। কুকুর তিনটিও এসে পড়েছে। অতএব, গোয়ালের জরাজীর্ণ তালপাতার ছাউনি ভেদ করে চড়ে বসল গোয়ালের চালায়। তারপর গোয়ালের ওপরে নুয়ে পড়া আমগাছের ডাল বেয়ে চড়ে বসল একেবারে মগডালে। অন্য পাশের ডাল বেয়ে নিচের দিকে ছুটল। লাফিয়ে পড়ল একটি কুটোর পালার মাথায়, তার পরে গড়িয়ে নেমেই দৌড়ে গিয়ে ঢুকে পড়ল একটি পুরোনো ইটের পাঁজার ভেতরে।
আজকের মতো বেঁচে গেল মা ও তার চারটি কিশোর বয়সী বাচ্চা। ঘটনাটি গত ৩০ ভাদ্রের, ১৪ সেপ্টেম্বরের। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার একটি গ্রামের।
যে কাঁদানে গ্যাস এরা স্প্রে করল, সেটি আত্মরক্ষার হাতিয়ার। পাশাপাশি আরও একটি গ্রন্থি এদের রয়েছে, সেটি থেকে বেরোয় একধরনের আঠালো সুগন্ধি রস, নাম যার Civet scent.
দেখতে পোষা বিড়ালের মতো অনেকটাই, চোখা মুখ, লম্বা লেজ ও এক নজরে বাদামি রঙের এই প্রাণীটির লেজে আছে সাতটি চওড়া কালো বলয়, গলার নিচে দুটো কালো-চওড়া টান, পিঠের ওপর থেকে মেরুদণ্ড বরাবর মোট ছয়টি লম্বা বাদামি রেখা বয়ে গেছে লেজের গোড়া বরাবর, সারা শরীরেই বুঁটি বুঁটি আঁকা। লম্বাটে শরীর, খাটো পা।
নিরীহ স্বভাবের এই প্রাণীটিকে নানা এলাকায় ডাকা হয় নানা নামে: গন্ধগোকুল ছোট বাগডাশ, ছোট খাটাশ, গন্ধগুলা, হাইলটালা ইত্যাদি। ফকিরহাট-বাগেরহাটে এটি ‘ঘোইলো’ নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম Small indian civet. বৈজ্ঞানিক নাম viverricula indica. শরীরের মাপ লেজসহ ৯০ সেন্টিমিটার। ঘাড় থেকে উচ্চতা ২২ সেন্টিমিটার। ওজন দু-তিন কেজি। বাঁচে ১৫ বছর।
এরা গেরস্থবাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, বাগান, পরিত্যক্ত ঘরবাড়ির মাচান ইত্যাদি জায়গায় থাকে। কিন্তু মানুষ এদের আপন তো করেইনি, বরং শত্রুজ্ঞানে মেরে ফেলে। এটা যেন ঐতিহ্যবাহী খেলা আমাদের দেশে।
এদের খাদ্যতালিকা বিশাল। ধেনোইঁদুর, গেছোইঁদুর, কাঠবিড়ালি, পাখি ও পাখির ডিম, ব্যাঙ-শামুক, সুযোগ পেলে গেরস্থদের হাঁস-মুরগি-ছাগলছানা ইত্যাদি। সব ধরনের ফল খায়। তাল-খেজুরের রস এদের প্রিয় পানীয়। কামড়ের শক্তি অবিশ্বাস্য। বিপদে পড়লে কুকুরের নাক-মুখ কামড়ে ধরলে কুকুর মুক্ত হতে পারে না সহজে।
বছরে কমপক্ষে দুবার ছানা তোলে এরা। প্রতি প্রসবে তিন-চারটি। মোটা গাছের গোড়ার ফোকরে-কোটরে, পাহাড়-টিলার ফাটল-ফোকরে অথবা মাটিতে গর্ত করে আঁতুড়ঘর বানায়।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে সারা দেশেই এদের দেখা মিলত। এখন নজরে পড়ে ক্বচিৎ।
আজকের মতো বেঁচে গেল মা ও তার চারটি কিশোর বয়সী বাচ্চা। ঘটনাটি গত ৩০ ভাদ্রের, ১৪ সেপ্টেম্বরের। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার একটি গ্রামের।
যে কাঁদানে গ্যাস এরা স্প্রে করল, সেটি আত্মরক্ষার হাতিয়ার। পাশাপাশি আরও একটি গ্রন্থি এদের রয়েছে, সেটি থেকে বেরোয় একধরনের আঠালো সুগন্ধি রস, নাম যার Civet scent.
দেখতে পোষা বিড়ালের মতো অনেকটাই, চোখা মুখ, লম্বা লেজ ও এক নজরে বাদামি রঙের এই প্রাণীটির লেজে আছে সাতটি চওড়া কালো বলয়, গলার নিচে দুটো কালো-চওড়া টান, পিঠের ওপর থেকে মেরুদণ্ড বরাবর মোট ছয়টি লম্বা বাদামি রেখা বয়ে গেছে লেজের গোড়া বরাবর, সারা শরীরেই বুঁটি বুঁটি আঁকা। লম্বাটে শরীর, খাটো পা।
নিরীহ স্বভাবের এই প্রাণীটিকে নানা এলাকায় ডাকা হয় নানা নামে: গন্ধগোকুল ছোট বাগডাশ, ছোট খাটাশ, গন্ধগুলা, হাইলটালা ইত্যাদি। ফকিরহাট-বাগেরহাটে এটি ‘ঘোইলো’ নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম Small indian civet. বৈজ্ঞানিক নাম viverricula indica. শরীরের মাপ লেজসহ ৯০ সেন্টিমিটার। ঘাড় থেকে উচ্চতা ২২ সেন্টিমিটার। ওজন দু-তিন কেজি। বাঁচে ১৫ বছর।
এরা গেরস্থবাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, বাগান, পরিত্যক্ত ঘরবাড়ির মাচান ইত্যাদি জায়গায় থাকে। কিন্তু মানুষ এদের আপন তো করেইনি, বরং শত্রুজ্ঞানে মেরে ফেলে। এটা যেন ঐতিহ্যবাহী খেলা আমাদের দেশে।
এদের খাদ্যতালিকা বিশাল। ধেনোইঁদুর, গেছোইঁদুর, কাঠবিড়ালি, পাখি ও পাখির ডিম, ব্যাঙ-শামুক, সুযোগ পেলে গেরস্থদের হাঁস-মুরগি-ছাগলছানা ইত্যাদি। সব ধরনের ফল খায়। তাল-খেজুরের রস এদের প্রিয় পানীয়। কামড়ের শক্তি অবিশ্বাস্য। বিপদে পড়লে কুকুরের নাক-মুখ কামড়ে ধরলে কুকুর মুক্ত হতে পারে না সহজে।
বছরে কমপক্ষে দুবার ছানা তোলে এরা। প্রতি প্রসবে তিন-চারটি। মোটা গাছের গোড়ার ফোকরে-কোটরে, পাহাড়-টিলার ফাটল-ফোকরে অথবা মাটিতে গর্ত করে আঁতুড়ঘর বানায়।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে সারা দেশেই এদের দেখা মিলত। এখন নজরে পড়ে ক্বচিৎ।
শরীফ খান, প্রথম-আলো