সাধারণ বীমা কর্পোরেশন (এসবিসি) সরকারি মালিকানাধীন একটি বাণিজ্যিক সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান। ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর অধীনে ৫০ মিলিয়ন টাকা অনুমোদিত মূলধন নিয়ে ১৪ মে ১৯৭৩ তারিখে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এককভাবে সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা হিসাবে বীমা ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। সরকারের বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ১৯৮৪ সালের অর্ডিন্যান্স খ-১ এর মাধ্যমে বেসরকারি খাতে বীমা কোম্পানি গঠনের অনুমতি দেয়া হয় এবং অনুমতিপ্রাপ্ত বীমা কোম্পানিসমূহকে বেসরকারি খাতের বীমা ব্যবসা সংগ্রহ এবং পুনঃবীমার ১০০ ভাগ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে করার অধিকার দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯০ সালে ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-এর বলে সরকার বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলিকে সরকারি খাতের ৫০ ভাগ বীমা ব্যবসা করার অধিকার প্রদান করেন। কিন্তু এই ব্যবস্থায় জটিলতা দেখা দেয়ায় সরকারি সিদ্ধান্তক্রমে সরকারি খাতের বীমা ব্যবসার ১০০ ভাগই সাধারণ বীমা কর্পোরেশন করে থাকে। তবে এই খাতের অর্জিত প্রিমিয়ামের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলির মধ্যে সমহারে বণ্টন করে দেয়া হয়। উল্লেখিত অ্যামেন্ডমেন্ট (১৯৯০)-এর মাধ্যমে পুনঃবীমার ক্ষেত্রে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলি তাদের প্রয়োজনীয় পুনঃবীমার ৫০ ভাগ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে ও অবশিষ্ট ৫০ ভাগ দেশে-বিদেশের সঙ্গে সরাসরি পুনঃবীমা করার অধিকার প্রদান করা হয়। সরকারের বেসরকারিকরণ নীতি অনুযায়ী বেসরকারি খাতে বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ফলে ১৯৮৪ সাল থেকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ৪৩টি বেসরকারি সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতা করে সফলতার সাথে বীমা ব্যবসা করে আসছে। ইন্সুরেন্স অ্যাক্ট-২০১০ এবং ইন্সুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি অ্যাক্ট-২০১০ কার্যকর হওয়ার ফলে বীমা বাজার আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী হয়েছে।
ইন্সুরেন্স অধ্যাদেশ ৮, ১৯৮৬র মাধ্যমে এই কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ২০০ মিলিয়ন টাকায় বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ২০০ মিলিয়ন ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ১০০ মিলিয়ন টাকা এবং তা সম্পূর্ণভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিশোধিত।
১৯৬৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে মোট ৮১টি বিভিন্ন বীমা কোম্পানি রেজিস্ট্রিকৃত হয়। এসব কোম্পানির মধ্যে ৪০টি দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত। অবশিষ্ট ৪১টি ছিল বিদেশি কোম্পানি। পাকিস্তানিদের মালিকানাধীন ৪০টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ১০টি পূর্ব পাকিস্তানে এ অঞ্চলের উদ্যোক্তাগণ প্রতিষ্ঠা করে। অবশিষ্ট ৩০টি কোম্পানি পশ্চিম পাকিস্তানিদের মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিবন্ধিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। পাকিস্তানে কার্যরত মোট ৪১টি বিদেশি বীমা কোম্পানির মধ্যে ২১টি ব্রিটেন, ৮টি ভারত, ৫টি আমেরিকা, ৩টি নিউজিল্যান্ড, ১টি অস্ট্রেলিয়া, ১টি কানাডা, ১টি ফ্রান্স এবং ১টি ছিল হংকং ভিত্তিক কোম্পানি। ৪০টি পাকিস্তানি বীমা কোম্পানির মধ্যে ২০টি জীবন বীমা, ২১টি জীবন ও সাধারণ বীমা এবং ৯টি বিবিধ বীমা ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিল। পক্ষান্তরে বিদেশি কোম্পানিগুলি জীবনবীমা ব্যতীত অন্যান্য বীমা ব্যবসায়ে অধিকতর সম্পৃক্ত ছিল। বিদেশি কোম্পানিগুলির মধ্যে ২টি শুধু জীবন বীমা এবং ১টি জীবন ও সাধারণ উভয় প্রকার বীমা ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিল।
পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত ও নিবন্ধিত ১০টি কোম্পানিসহ স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে পাকিস্তানের এ অঞ্চলে মোট ৭৫টি বীমা কোম্পানি ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ ১৯৭২-এর মাধ্যমে দেশের পুরো বীমা ব্যবসায় রাষ্ট্রীয়করণ করে। জাতীয়করণকৃত ৭৫টি বীমা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণের জন্য সরকার ৫টি বিভিন্ন বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত করে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত বীমা কর্পোরেশনগুলি ছিল বাংলাদেশ জাতীয় বীমা কর্পোরেশন, কর্ণফুলি বীমা কর্পোরেশন, তিস্তা বীমা কর্পোরেশন, সুরমা জীবনবীমা কর্পোরেশন এবং রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশন। সরকার ১৯৭৩ সালে দেশের বীমা শিল্পকে বিশেষায়ন ও সমন্বিতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই বছরে সুরমা জীবনবীমা কর্পোরেশন ও রূপসা জীবনবীমা কর্পোরেশনকে একত্রিত করে ‘জীবন বীমা কর্পোরেশন’ এবং কর্ণফুলি বীমা কর্পোরেশন ও তিস্তা বীমা কর্পোরেশনকে একত্রিত করে ‘সাধারণ বীমা কর্পোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে সরকার জাতীয় বীমা কর্পোরেশনকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন-এর সাথে একত্রিত করার মাধ্যমে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে আরও শক্তিশালী করে।
এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সরকার কর্তৃক মনোনীত ৭ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা বোর্ডের উপর ন্যাস্ত। উক্ত বোর্ডে একজন চেয়ারম্যান (খন্ডকালীন) ও পাঁচজন পরিচালক (খন্ডকালীন) ছাড়াও একজন সার্বক্ষণিক ম্যানেজিং ডিরেক্টর সদস্য হিসেবে রয়েছেন। ম্যানেজিং ডিরেক্টর অত্র সংস্থার মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এর অধীনে ছয়টি জোনাল, দুইটি রিজিওনাল অফিসসহ অন্যান্য শাখা, উপ-শাখা ও ইউনিট অফিস নিয়ে সর্বমোট ৮৮টি অফিস রয়েছে। এই অফিসসমূহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী মোট জনবল সংখ্যা ২,৬২৩। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৯৫৫।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বীমা ঝুঁকির আওতায় সম্পদ ও জাতীয় জীবনকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে পূনর্গঠনে সাহায্য করে। সংস্থাটির আয়ের উৎস সাধারণ বীমা সংক্রান্ত সকল বীমা ব্যবসা, পুনঃবীমা ব্যবসা এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে প্রাপ্ত ইন্টারেস্ট ও ডিভিডেন্ড। জীবন বীমা ব্যতীত সাধারণ বীমা সংক্রান্ত সকল বীমা যেমন অগ্নি, নৌ-কার্গো, নৌ-হাল, এভিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ারিং, মটর, বিবিধ ইত্যাদি প্রচলিত বীমার ঝুঁকি গ্রহণ; এছাড়া ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা, মটর বীমার আওতায় সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত ব্যক্তিদের বীমা, মারাত্মক ব্যাধি বীমা, বাংলাদেশিদের বিদেশে অবস্থানকালীন চিকিৎসা ব্যয় বীমা এবং এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টির ঝুঁকিও গ্রহণ করে থাকে। আবার কিছু অপ্রচলিত বীমা যেমন শস্য বীমা, গবাদিপশু বীমা, গার্মেন্ট কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমা, জনতা দূর্ঘটনা বীমাও করে থাকে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন একদিকে সরকারি সম্পদের বীমা দায় গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান এবং অপরদিকে জাতীয় পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ২০১০ সালে অগ্নি, নৌ ও বিবিধ খাতে মোট ১৬৫৯ মিলিয়ন টাকা প্রিমিয়াম অর্জন করেছে। অপরদিকে জাতীয় পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ৪০৮৫ মিলিয়ন টাকা পুনঃবীমা প্রিমিয়াম অর্জন করেছে। পুনঃবীমা প্রিমিয়াম গ্রহণ করে প্রায় ৯৭৭ মিলিয়ন টাকা কমিশন প্রদান করেছে। অপরদিকে বিদেশে ২৫৬৩ মিলিয়ন টাকা পুনঃবীমা প্রিমিয়াম প্রদান করে ৩৫৪ মিলিয়ন টাকা কমিশন আয় করেছে। আর্থিক ভিত শক্তিশালী থাকার কারণে কর্পোরেশনটি তার অবলিখিত ঝুঁকির একটি বড় অংশ পুনঃবীমা না করে নিজেই ধারণ করে।
এই কর্পোরেশন একই বছরে বিনিয়োগ ও বিবিধ খাত হতে ৬৩৫ মিলিয়ন টাকা আয় করেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত, কোম্পানিসমূহের শেয়ার ও ডিবেঞ্চার ক্রয়-বিক্রয় করে এ আয় হয়েছে।
দাবী পরিশোধের ক্ষেত্রে কর্পোরেশন সবসময় স্বল্প সময়ের মধ্যে দাবী নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। নিজস্ব ব্যবসার জন্য সরাসরি ১৪৭ মিলিয়ন টাকা, পুনঃবীমা বাবদ ১৯২৭ মিলিয়ন টাকা দাবী পরিশোধ করে। অপরপক্ষে, পুনঃবীমাকারীদের নিকট হতে ৪১৮ মিলিয়ন টাকা দাবী আদায় করেছে। কর্পোরেশন ২০১০ সালে ১৫১৩ মিলিয়ন টাকা নীট দাবী পরিশোধ করেছে।
প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের আয়করপূর্ব নীট মুনাফা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০ সালে ১২৫৫ মিলিয়ন টাকা আয়করপূর্ব নীট মুনাফা অর্জন করেছে। আয়কর হিসেবে ২৭৪ মিলিয়ন টাকা ও লভ্যাংশ হিসাবে ২০০ মিলিয়ন টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
ইন্সুরেন্স অধ্যাদেশ ৮, ১৯৮৬র মাধ্যমে এই কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ২০০ মিলিয়ন টাকায় বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ২০০ মিলিয়ন ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ১০০ মিলিয়ন টাকা এবং তা সম্পূর্ণভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিশোধিত।
১৯৬৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে মোট ৮১টি বিভিন্ন বীমা কোম্পানি রেজিস্ট্রিকৃত হয়। এসব কোম্পানির মধ্যে ৪০টি দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত। অবশিষ্ট ৪১টি ছিল বিদেশি কোম্পানি। পাকিস্তানিদের মালিকানাধীন ৪০টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ১০টি পূর্ব পাকিস্তানে এ অঞ্চলের উদ্যোক্তাগণ প্রতিষ্ঠা করে। অবশিষ্ট ৩০টি কোম্পানি পশ্চিম পাকিস্তানিদের মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিবন্ধিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। পাকিস্তানে কার্যরত মোট ৪১টি বিদেশি বীমা কোম্পানির মধ্যে ২১টি ব্রিটেন, ৮টি ভারত, ৫টি আমেরিকা, ৩টি নিউজিল্যান্ড, ১টি অস্ট্রেলিয়া, ১টি কানাডা, ১টি ফ্রান্স এবং ১টি ছিল হংকং ভিত্তিক কোম্পানি। ৪০টি পাকিস্তানি বীমা কোম্পানির মধ্যে ২০টি জীবন বীমা, ২১টি জীবন ও সাধারণ বীমা এবং ৯টি বিবিধ বীমা ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিল। পক্ষান্তরে বিদেশি কোম্পানিগুলি জীবনবীমা ব্যতীত অন্যান্য বীমা ব্যবসায়ে অধিকতর সম্পৃক্ত ছিল। বিদেশি কোম্পানিগুলির মধ্যে ২টি শুধু জীবন বীমা এবং ১টি জীবন ও সাধারণ উভয় প্রকার বীমা ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিল।
পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত ও নিবন্ধিত ১০টি কোম্পানিসহ স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে পাকিস্তানের এ অঞ্চলে মোট ৭৫টি বীমা কোম্পানি ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ ১৯৭২-এর মাধ্যমে দেশের পুরো বীমা ব্যবসায় রাষ্ট্রীয়করণ করে। জাতীয়করণকৃত ৭৫টি বীমা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণের জন্য সরকার ৫টি বিভিন্ন বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত করে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত বীমা কর্পোরেশনগুলি ছিল বাংলাদেশ জাতীয় বীমা কর্পোরেশন, কর্ণফুলি বীমা কর্পোরেশন, তিস্তা বীমা কর্পোরেশন, সুরমা জীবনবীমা কর্পোরেশন এবং রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশন। সরকার ১৯৭৩ সালে দেশের বীমা শিল্পকে বিশেষায়ন ও সমন্বিতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই বছরে সুরমা জীবনবীমা কর্পোরেশন ও রূপসা জীবনবীমা কর্পোরেশনকে একত্রিত করে ‘জীবন বীমা কর্পোরেশন’ এবং কর্ণফুলি বীমা কর্পোরেশন ও তিস্তা বীমা কর্পোরেশনকে একত্রিত করে ‘সাধারণ বীমা কর্পোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে সরকার জাতীয় বীমা কর্পোরেশনকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন-এর সাথে একত্রিত করার মাধ্যমে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে আরও শক্তিশালী করে।
এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সরকার কর্তৃক মনোনীত ৭ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা বোর্ডের উপর ন্যাস্ত। উক্ত বোর্ডে একজন চেয়ারম্যান (খন্ডকালীন) ও পাঁচজন পরিচালক (খন্ডকালীন) ছাড়াও একজন সার্বক্ষণিক ম্যানেজিং ডিরেক্টর সদস্য হিসেবে রয়েছেন। ম্যানেজিং ডিরেক্টর অত্র সংস্থার মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এর অধীনে ছয়টি জোনাল, দুইটি রিজিওনাল অফিসসহ অন্যান্য শাখা, উপ-শাখা ও ইউনিট অফিস নিয়ে সর্বমোট ৮৮টি অফিস রয়েছে। এই অফিসসমূহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী মোট জনবল সংখ্যা ২,৬২৩। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৯৫৫।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বীমা ঝুঁকির আওতায় সম্পদ ও জাতীয় জীবনকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে পূনর্গঠনে সাহায্য করে। সংস্থাটির আয়ের উৎস সাধারণ বীমা সংক্রান্ত সকল বীমা ব্যবসা, পুনঃবীমা ব্যবসা এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে প্রাপ্ত ইন্টারেস্ট ও ডিভিডেন্ড। জীবন বীমা ব্যতীত সাধারণ বীমা সংক্রান্ত সকল বীমা যেমন অগ্নি, নৌ-কার্গো, নৌ-হাল, এভিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ারিং, মটর, বিবিধ ইত্যাদি প্রচলিত বীমার ঝুঁকি গ্রহণ; এছাড়া ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা, মটর বীমার আওতায় সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত ব্যক্তিদের বীমা, মারাত্মক ব্যাধি বীমা, বাংলাদেশিদের বিদেশে অবস্থানকালীন চিকিৎসা ব্যয় বীমা এবং এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টির ঝুঁকিও গ্রহণ করে থাকে। আবার কিছু অপ্রচলিত বীমা যেমন শস্য বীমা, গবাদিপশু বীমা, গার্মেন্ট কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমা, জনতা দূর্ঘটনা বীমাও করে থাকে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন একদিকে সরকারি সম্পদের বীমা দায় গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান এবং অপরদিকে জাতীয় পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ২০১০ সালে অগ্নি, নৌ ও বিবিধ খাতে মোট ১৬৫৯ মিলিয়ন টাকা প্রিমিয়াম অর্জন করেছে। অপরদিকে জাতীয় পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ৪০৮৫ মিলিয়ন টাকা পুনঃবীমা প্রিমিয়াম অর্জন করেছে। পুনঃবীমা প্রিমিয়াম গ্রহণ করে প্রায় ৯৭৭ মিলিয়ন টাকা কমিশন প্রদান করেছে। অপরদিকে বিদেশে ২৫৬৩ মিলিয়ন টাকা পুনঃবীমা প্রিমিয়াম প্রদান করে ৩৫৪ মিলিয়ন টাকা কমিশন আয় করেছে। আর্থিক ভিত শক্তিশালী থাকার কারণে কর্পোরেশনটি তার অবলিখিত ঝুঁকির একটি বড় অংশ পুনঃবীমা না করে নিজেই ধারণ করে।
এই কর্পোরেশন একই বছরে বিনিয়োগ ও বিবিধ খাত হতে ৬৩৫ মিলিয়ন টাকা আয় করেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত, কোম্পানিসমূহের শেয়ার ও ডিবেঞ্চার ক্রয়-বিক্রয় করে এ আয় হয়েছে।
দাবী পরিশোধের ক্ষেত্রে কর্পোরেশন সবসময় স্বল্প সময়ের মধ্যে দাবী নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। নিজস্ব ব্যবসার জন্য সরাসরি ১৪৭ মিলিয়ন টাকা, পুনঃবীমা বাবদ ১৯২৭ মিলিয়ন টাকা দাবী পরিশোধ করে। অপরপক্ষে, পুনঃবীমাকারীদের নিকট হতে ৪১৮ মিলিয়ন টাকা দাবী আদায় করেছে। কর্পোরেশন ২০১০ সালে ১৫১৩ মিলিয়ন টাকা নীট দাবী পরিশোধ করেছে।
প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের আয়করপূর্ব নীট মুনাফা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০ সালে ১২৫৫ মিলিয়ন টাকা আয়করপূর্ব নীট মুনাফা অর্জন করেছে। আয়কর হিসেবে ২৭৪ মিলিয়ন টাকা ও লভ্যাংশ হিসাবে ২০০ মিলিয়ন টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
[মোহা. রেজাউল করিম - বাংলাপিডিয়া]