রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল তথা রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার ও কৃষিঋণ সরবরাহকারী বৃহত্তম আর্থিক প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সকল শাখা ও অন্যান্য কার্যালয় এবং সব দায় ও সম্পদ গ্রহণ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১৯৮৬ সালের ৫৮ নম্বর অধ্যাদেশ বলে ১৯৮৭ সালের ১৫ মার্চ ব্যাংকটি কার্যক্রম শুরু করে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি সম্ভাবনার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার এবং এ অঞ্চলের কৃষির সকল খাত ও উপ-খাতের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে শস্য উৎপাদনে কৃষিঋণ সরবরাহ, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনমূলক কর্মকান্ডের জন্য ঋণ বিতরণ ছাড়াও সকল প্রকার বাণিজ্যিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে। ব্যাংকের প্রচলিত খাতে ঋণ বিতরণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে উচ্চ মূল্যের শস্য উৎপাদন, বাণিজ্যিকভাবে পশু ও হাঁস-মুরগির খামার স্থাপন ও কৃষিশিল্প ব্যবসায় অর্থায়নে ব্যাংক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বর্তমানে ঢাকার একটি শাখাসহ ৩৬৪টি শাখা নিয়ে ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে; এর মধ্যে গ্রামীণ শাখার সংখ্যা ৩০৪টি। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় রাজশাহী বিভাগীয় শহরে অবস্থিত। রাজশাহী ও রংপুরে ২টি বিভাগীয় কার্যালয় এবং ২টি বিভাগীয় নিরীক্ষা কার্যালয় আছে। জেলা পর্যায়ে ১৮টি জোনাল কার্যালয় ও ১৮টি স্বতন্ত্র জোনাল নিরীক্ষা কার্যালয় দ্বারা শাখা ও জোনাল কার্যালয়গুলির কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ব্যাংকের একমাত্র প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটটি রাজশাহী শহরে অবস্থিত।
রাকাব ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালক পর্ষদ কর্তৃক পরিচালিত। পরিচালক পর্ষদের সকল সদস্য সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এছাড়া জরুরি নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য রয়েছে পরিচালক পর্ষদের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাহী কমিটি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
ব্যাংক ঋণ কার্যক্রম পরিচালনায় মোট ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৬০ ভাগ শস্য উৎপাদন খাতে বরাদ্দ রেখে বাকি ঋণ অন্যান্য খাতে বিতরণ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শস্য উৎপাদনে তথা দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ব্যাংক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক এবং খাতভিত্তিক কৃষি ও কৃষির সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে ৭টি খাত ও কৃষিভিত্তিক প্রকল্প খাতকে ১০১টি উপ-খাত চিহ্নিত করে প্রতিটি খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন প্রকল্প স্থাপন, পুরাতন প্রকল্প সংস্কার ও উন্নয়নে আগ্রহী উদ্যোক্তাগণকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করার লক্ষ্যে প্রধান কার্যালয়ে একটি ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন সেল’ গঠন করা হয়েছে। আগ্রহী উদ্যোক্তাগণের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলির বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা, পরামর্শ প্রদান ও দ্রুত মূল্যায়নসহ প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি জোনাল কার্যালয়েও ‘ক্রেডিট কমিটি’ রয়েছে। একই খাতে ঋণের প্রবাহ কেন্দ্রীভূত হওয়া রোধকল্পে ঋণ খাতের বহুমুখীতা সৃষ্টি ও ঋণের বহুমুখীকরণ, আমদানি বিকল্প কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ, দীর্ঘমেয়াদি ও বৃহদাংক ঋণের তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুনভাবে ‘ঋণ নীতিমালা ২০০৫’ জারি করা হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলের ভূমিহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যাংক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দারিদ্র্য বিমোচন ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এসব কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে দল ও ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করা হয়। প্রচলিত জামানত নির্ভর ঋণ নীতির পরিবর্তে নিবিড় তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জামানতবিহীন ঋণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। কর্মসূচিগুলির মধ্যে ছাগল পালন কর্মসূচি, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামার পদ্ধতিতে শস্য নিবিড়করণ প্রকল্প, রাকাব আত্মনির্ভর ঋণ কর্মসূচি, স্ব-নির্ভর ঋণ কর্মসূচি, মহিলা উদ্যোক্তা উন্নয়ন ঋণ প্রকল্প, প্রতিবন্ধীদের জন্য ঋণ কর্মসূচি, ভেষজ বাগান/নার্সারি স্থাপন ঋণ কর্মসূচি, শস্য গুদাম ঋণ প্রকল্প ও দারিদ্র্য শূন্য বিশেষ ঋণ কর্মসূচি অন্যতম। সম্প্রতি দেশের সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের ভোগ্য পণ্যের চাহিদা পূরণ ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য ‘ভোক্তা ঋণ প্রকল্প’ ও ‘চাকরিজীবীদের জন্য বিশেষ ঋণ’ কর্মসূচি চালু করেছে।
বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট দুটি নতুন ঋণ বিতরণ কর্মসূচি যথাক্রমে ১. SEDCP (Small Enterprises Development Credit Project) ২. NCDP (Northwest Crop Diversification Project)-এর কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন জেলায় উৎসাহী কৃষকগণকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে নতুন ক্ষুদ্র প্রকল্প স্থাপন, পুরনো প্রকল্পের উন্নয়ন, নতুন ব্যবসা চালু ও পুরনো ব্যবসার উন্নয়ন, উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন, কৃষি প্রকল্প স্থাপন ও কৃষি পণ্যের ব্যবসা উন্নয়নে কৃষিঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সরকারি নীতিমালা মোতাবেক কৃষি ঋণের সুদের হার শতকরা ৮ থেকে ১০ ভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। ব্যাংকের প্রচলিত ঋণ খাতে ঋণ বিতরণের পাশাপাশি আমদানি বিকল্প কৃষিপণ্য যেমন বিভিন্ন ধরনের ডাল, তেলবীজ, মসলাজাতীয় ফসল, ভূট্টাসহ ১৯টি আমদানি নির্ভর অপ্রচলিত অর্থকরী ফসল উৎপাদনের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করে এ সকল খাতে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ঋণের সুদের হার মাত্র শতকরা ২ ভাগ ধার্য করা হয়েছে। ব্যাংকটি লাভজনকভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি (০১-১১-১৯৯৯ হতে ৩১-১০-২০০৪) একটি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। ‘মিরাকল’ এই কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। এই কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে ব্যাংক ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে ২১ মিলিয়ন টাকা এবং ২০০০-০১ অর্থবছরে ২৪ মিলিয়ন টাকা মুনাফা অর্জন করে। পরবর্তীকালে এই কর্মসূচির উপর মধ্যবর্তী মূল্যায়ন ও পর্যালোচনালদ্ধ বিষয়াদির ভিত্তিতে ২০১০ সালের মধ্যে ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসান কাটিয়ে উঠে স্বনির্ভরতা ও প্রকৃত মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০১-১০ পর্যন্ত একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা (Rakub Perspective Plan 2001-10) প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এই পরিকল্পনায় ব্যাংকিং কার্যক্রমে বাস্তবধর্মী সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রধান কার্যালয়, নিয়ন্ত্রণকারী কার্যালয় ও মাঠপর্যায়ে কর্মচাঞ্চল্য ও তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য অধিক গতিশীল ও বেগবান কর্মপদ্ধতি প্রবর্তনসহ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হতে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শক পর্যন্ত সকলকে ব্যাংকের পরিচালনগত কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের কার্যক্রম বেগবান করার লক্ষ্যে MBO (management by objective), PARL (participation of all for recovery of total loans), BUP (bottom up planning) Ges participatory management ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
আমানত সংগ্রহ ব্যাংকের স্থিতিশীল বিনিয়োগযোগ্য তহবিল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমানত সংগ্রহকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ তহবিলের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ভুক্ত ৩০৪টি (শতকরা ৮৪ ভাগ) শাখা আমানত সংগ্রহে অবদান রাখছে। আমানত সংগ্রহে ব্যাংক রাকাব হজ্ব সঞ্চয়ী হিসাব, রাকাব শিক্ষা সঞ্চয় প্রকল্প, রাকাব গ্রামীণ পেনশন সঞ্চয় প্রকল্প, রাকাব সন্তান-সন্ততি বিবাহ সঞ্চয় প্রকল্প নামে কয়েকটি নতুন আকর্ষণীয় আমানত স্কিম চালু করেছে।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও গ্রাহকসেবা তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় ব্যাংকের রয়েছে পৃথক কম্পিউটার বিভাগ। আগামী ২০১০-১১ অর্থবছরের মধ্যে ব্যাংকের ৩৬৪টি শাখাতে কম্পিউটার-এর মাধ্যমে লেনদেন চালু ও গ্রাহকসেবা প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করে ইতোমধ্যে পারস্পেকটিভ আইসিটি প্লান ২০০৬-২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের সকল বিভাগ, রংপুরস্থ বিভাগীয় কার্যালয় ও ১৮টি জোনাল কার্যালয়ে কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে এবং e-mail-এর মাধ্যমে এই মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান) চালুর মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্যাদি ইলেকট্রনিক্যালি আদান-প্রদান ও প্রসেস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা শাখা ও এলপিও তে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহক লেনদেন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। জেলা শাখাসমূহে টাকা গণনার মেশিন, জেলা শাখাসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন শাখাসমূহেও জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে।
রাকাব ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালক পর্ষদ কর্তৃক পরিচালিত। পরিচালক পর্ষদের সকল সদস্য সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এছাড়া জরুরি নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য রয়েছে পরিচালক পর্ষদের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাহী কমিটি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
ব্যাংক ঋণ কার্যক্রম পরিচালনায় মোট ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৬০ ভাগ শস্য উৎপাদন খাতে বরাদ্দ রেখে বাকি ঋণ অন্যান্য খাতে বিতরণ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শস্য উৎপাদনে তথা দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ব্যাংক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক এবং খাতভিত্তিক কৃষি ও কৃষির সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে ৭টি খাত ও কৃষিভিত্তিক প্রকল্প খাতকে ১০১টি উপ-খাত চিহ্নিত করে প্রতিটি খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন প্রকল্প স্থাপন, পুরাতন প্রকল্প সংস্কার ও উন্নয়নে আগ্রহী উদ্যোক্তাগণকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করার লক্ষ্যে প্রধান কার্যালয়ে একটি ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন সেল’ গঠন করা হয়েছে। আগ্রহী উদ্যোক্তাগণের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলির বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা, পরামর্শ প্রদান ও দ্রুত মূল্যায়নসহ প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি জোনাল কার্যালয়েও ‘ক্রেডিট কমিটি’ রয়েছে। একই খাতে ঋণের প্রবাহ কেন্দ্রীভূত হওয়া রোধকল্পে ঋণ খাতের বহুমুখীতা সৃষ্টি ও ঋণের বহুমুখীকরণ, আমদানি বিকল্প কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ, দীর্ঘমেয়াদি ও বৃহদাংক ঋণের তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুনভাবে ‘ঋণ নীতিমালা ২০০৫’ জারি করা হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলের ভূমিহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যাংক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দারিদ্র্য বিমোচন ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এসব কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে দল ও ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করা হয়। প্রচলিত জামানত নির্ভর ঋণ নীতির পরিবর্তে নিবিড় তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জামানতবিহীন ঋণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। কর্মসূচিগুলির মধ্যে ছাগল পালন কর্মসূচি, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামার পদ্ধতিতে শস্য নিবিড়করণ প্রকল্প, রাকাব আত্মনির্ভর ঋণ কর্মসূচি, স্ব-নির্ভর ঋণ কর্মসূচি, মহিলা উদ্যোক্তা উন্নয়ন ঋণ প্রকল্প, প্রতিবন্ধীদের জন্য ঋণ কর্মসূচি, ভেষজ বাগান/নার্সারি স্থাপন ঋণ কর্মসূচি, শস্য গুদাম ঋণ প্রকল্প ও দারিদ্র্য শূন্য বিশেষ ঋণ কর্মসূচি অন্যতম। সম্প্রতি দেশের সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের ভোগ্য পণ্যের চাহিদা পূরণ ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য ‘ভোক্তা ঋণ প্রকল্প’ ও ‘চাকরিজীবীদের জন্য বিশেষ ঋণ’ কর্মসূচি চালু করেছে।
বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট দুটি নতুন ঋণ বিতরণ কর্মসূচি যথাক্রমে ১. SEDCP (Small Enterprises Development Credit Project) ২. NCDP (Northwest Crop Diversification Project)-এর কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন জেলায় উৎসাহী কৃষকগণকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে নতুন ক্ষুদ্র প্রকল্প স্থাপন, পুরনো প্রকল্পের উন্নয়ন, নতুন ব্যবসা চালু ও পুরনো ব্যবসার উন্নয়ন, উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন, কৃষি প্রকল্প স্থাপন ও কৃষি পণ্যের ব্যবসা উন্নয়নে কৃষিঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সরকারি নীতিমালা মোতাবেক কৃষি ঋণের সুদের হার শতকরা ৮ থেকে ১০ ভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। ব্যাংকের প্রচলিত ঋণ খাতে ঋণ বিতরণের পাশাপাশি আমদানি বিকল্প কৃষিপণ্য যেমন বিভিন্ন ধরনের ডাল, তেলবীজ, মসলাজাতীয় ফসল, ভূট্টাসহ ১৯টি আমদানি নির্ভর অপ্রচলিত অর্থকরী ফসল উৎপাদনের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করে এ সকল খাতে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ঋণের সুদের হার মাত্র শতকরা ২ ভাগ ধার্য করা হয়েছে। ব্যাংকটি লাভজনকভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি (০১-১১-১৯৯৯ হতে ৩১-১০-২০০৪) একটি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। ‘মিরাকল’ এই কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। এই কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে ব্যাংক ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে ২১ মিলিয়ন টাকা এবং ২০০০-০১ অর্থবছরে ২৪ মিলিয়ন টাকা মুনাফা অর্জন করে। পরবর্তীকালে এই কর্মসূচির উপর মধ্যবর্তী মূল্যায়ন ও পর্যালোচনালদ্ধ বিষয়াদির ভিত্তিতে ২০১০ সালের মধ্যে ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসান কাটিয়ে উঠে স্বনির্ভরতা ও প্রকৃত মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০১-১০ পর্যন্ত একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা (Rakub Perspective Plan 2001-10) প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এই পরিকল্পনায় ব্যাংকিং কার্যক্রমে বাস্তবধর্মী সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রধান কার্যালয়, নিয়ন্ত্রণকারী কার্যালয় ও মাঠপর্যায়ে কর্মচাঞ্চল্য ও তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য অধিক গতিশীল ও বেগবান কর্মপদ্ধতি প্রবর্তনসহ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হতে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শক পর্যন্ত সকলকে ব্যাংকের পরিচালনগত কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের কার্যক্রম বেগবান করার লক্ষ্যে MBO (management by objective), PARL (participation of all for recovery of total loans), BUP (bottom up planning) Ges participatory management ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
আমানত সংগ্রহ ব্যাংকের স্থিতিশীল বিনিয়োগযোগ্য তহবিল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমানত সংগ্রহকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ তহবিলের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ভুক্ত ৩০৪টি (শতকরা ৮৪ ভাগ) শাখা আমানত সংগ্রহে অবদান রাখছে। আমানত সংগ্রহে ব্যাংক রাকাব হজ্ব সঞ্চয়ী হিসাব, রাকাব শিক্ষা সঞ্চয় প্রকল্প, রাকাব গ্রামীণ পেনশন সঞ্চয় প্রকল্প, রাকাব সন্তান-সন্ততি বিবাহ সঞ্চয় প্রকল্প নামে কয়েকটি নতুন আকর্ষণীয় আমানত স্কিম চালু করেছে।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও গ্রাহকসেবা তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় ব্যাংকের রয়েছে পৃথক কম্পিউটার বিভাগ। আগামী ২০১০-১১ অর্থবছরের মধ্যে ব্যাংকের ৩৬৪টি শাখাতে কম্পিউটার-এর মাধ্যমে লেনদেন চালু ও গ্রাহকসেবা প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করে ইতোমধ্যে পারস্পেকটিভ আইসিটি প্লান ২০০৬-২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের সকল বিভাগ, রংপুরস্থ বিভাগীয় কার্যালয় ও ১৮টি জোনাল কার্যালয়ে কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে এবং e-mail-এর মাধ্যমে এই মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান) চালুর মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্যাদি ইলেকট্রনিক্যালি আদান-প্রদান ও প্রসেস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা শাখা ও এলপিও তে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহক লেনদেন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। জেলা শাখাসমূহে টাকা গণনার মেশিন, জেলা শাখাসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন শাখাসমূহেও জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে।
[মোহাম্মদ আবদুল মজিদ - বাংলাপিডিয়া]