সমবায় ব্যাংকিং ১৯০৪ সালে সমবায় সমিতি আইন জারির পর বাংলাদেশ অঞ্চলসহ ব্রিটিশ ভারতের সর্বত্র সমবায় সমিতি, বিশেষত কৃষি সমবায় ঋণদান সমিতি গঠন শুরু হয়। সমবায় আন্দোলনকে অধিকতর গতিময়তা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯১২ সালে সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন প্রণীত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৪০ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদ, ১৯১২ সালের সমবায় আইনকে সংশোধন করে দ্য বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটি অ্যাক্ট ১৯৪০ প্রণয়নের মাধ্যমে সমবায় আন্দোলনকে আরও অর্থবহ ও কার্যকর করার বিধান সৃষ্টি করে। এ আইন ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে এবং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪০ সালের দ্য বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটি অ্যাক্ট বাতিলপূর্বক সমবায় সমিতিসমূহ অধ্যাদেশ ১৯৮৪ জারি করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল প্রকার সমবায় সমিতি এই আইন এবং সমবায় বিধিমালা ১৯৮৭-র অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৪৭ সালে ভারতবিভক্তি তথা ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর পূর্ব পাকিস্তানের সমবায়ী জনগণ একটি এ্যাপেক্স ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর ফলে ১৯৪০ সালের দ্য বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটিজ অ্যাক্ট অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৪৮ সালের ৩১ মার্চ তারিখে ইস্ট পাকিস্তান প্রভিনশিয়াল কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর উক্ত ব্যাংকটি জাতীয় মর্যাদা অর্জন করে এবং বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেড নামধারণ পূর্বক সমবায় ব্যাংকিং কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করে। পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৭৭ সালে এর নাম হয় বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড (বিএসবিএল)।
বাংলাদেশের সমবায় পদ্ধতি তিন স্তরবিশিষ্ট যার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি., মধ্যভাগে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় সমিতিসমূহ এবং মাঠপর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক সমিতিসমূহ। বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি.-এর প্রধান কাজ হলো মধ্যভাগে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকসমূহকে অর্থের যোগান দেওয়া, যাতে তারা পুনরায় সে অর্থ প্রাথমিক সমিতিসমূহের নিকট লগ্নি করতে পারে। প্রাথমিক সমিতিসমূহ আবার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকগুলি হতে প্রাপ্ত তহবিল তাদের সদস্যদের মধ্যে ঋণ হিসেবে বিনিয়োগ করে থাকে। দেশের সকল সমবায় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি.-এর সদস্য।
বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা যা প্রতিটি ১,০০০ টাকা মূল্যের ১,০০,০০০টি শেয়ারে বিভক্ত। এর ৪,৫০০টি সাধারণ শেয়ার সরকার কর্তৃক পরিশোধিত, ৫৪,৬৮৭টি শেয়ার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক এবং সমিতিসমূহ দ্বারা ৫০০ টাকা হারে আংশিক পরিশোধিত। অর্থাৎ বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৩.১৮ কোটি টাকা।
কো-অপারেটিভ সোসাইটিজ অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪-র ৩৯(১) ধারা অনুযায়ী সমবায় ব্যাংক-এর সদস্য ব্যতীত অন্যকোন ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করতে পারে না। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৮২। ৩০.৬.৯৮ তারিখে ব্যাংকটির সদস্য সংখ্যার বিভাজন নিম্নরূপ:
ক. কেন্দ্রীয় সমিতিসমূহ: কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক (৭১), কেন্দ্রীয় বহুমুখী সমবায় সমিতি (৪৩), কেন্দ্রীয় ইক্ষুচাষি সমবায় সমিতি (১৬), থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি (৫৩)। খ. প্রাথমিক সমিতিসমূহ: সমবায় জমি বন্ধকী ব্যাংক (৪৩), প্রাথমিক বহুমুখী সমবায় সমিতি (১৫৫), টাউন কো-অপারেটিভ ব্যাংক সোসাইটি (১২), মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি (৩), অন্যান্য সমিতি (৮৬)।
বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি.-এর উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে: ক. সমবায় সেক্টরে শীর্ষ (apex) আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করা; খ. সমবায় সমিতিসমূহের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা; গ. কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকসহ অপরাপর সদস্য সমিতিসমূহের নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের কাজের সমন্বয় সাধন; ঘ. প্রাথমিক সমিতিসমূহের উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণে সহায়তা করা এবং এ সকল উৎপাদিত দ্রব্যাদি সংরক্ষণের জন্য গুদামঘরসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা; ঙ. আওতাভুক্ত/তালিকাভুক্ত সমিতিসমূহকে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান এবং চ. সমবায় আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী সমবায় সমিতিসমূহের সাথে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা।
সমবায় ঋণকাঠামোর প্রাথমিক একক হলো প্রাথমিক ঋণদান সমিতিসমূহ। প্রাথমিক সমিতিসমূহের উদ্দেশ্য হলো কৃষি, বনায়ন, মৎস্য শিকার এবং কুটির শিল্পে নিয়োজিত সমবায়ী সদস্যদের অর্থ যোগান দেওয়া। এ সমিতিগুলি আংশিকভাবে মধ্যস্তরের কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকগুলি কর্তৃক অর্থপুষ্ট হয়ে থাকে। সমবায় জমি বন্ধকী ব্যাংক এবং নগর/শহরভিত্তিক সমবায় ব্যাংকগুলিও প্রাথমিক সমিতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাংকগুলিও তাদের কৃষি এবং কুটির শিল্পে নিয়োজিত সদস্যদেরকে অর্থ যোগান দিয়ে থাকে। তবে আংশিকভাবে এ ব্যাংকগুলি বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি. কর্তৃক অর্থপুষ্ট হয়ে থাকে। এ ধরনের সমিতি বা ব্যাংকের সদস্যপদ কেবল ব্যক্তিসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
সমবায় ব্যাংকিং এবং সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকিং-এর মধ্যে কয়েকটি মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। সমবায় ব্যাংক মূলত কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত নয়। এটি গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহ, বিশেষত কৃষি অর্থায়নে জড়িত। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি তাদের শাখা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রধান কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি. এবং কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকসমূহের প্রত্যেকটি স্ব স্ব ক্ষেত্রে এক একটি স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে পৃথক পৃথক এলাকায় স্বতন্ত্র পরিচালনা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। সমবায় ব্যাংকগুলি সমবায় ভিত্তিতে গঠিত, সমবায় আইনের অধীনে সমবায়ী সদস্যদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এবং সমবায় সমিতিসমূহের নিবন্ধক কর্তৃক নিরীক্ষিত হয়ে থাকে। অপরদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি ব্যাংক কোম্পানি আইনের অধীনে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এবং সরকার কর্তৃক নিয়োজিত বহির্নিরীক্ষক কর্তৃক নিরীক্ষিত হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি নিয়মাচার পালন সাপেক্ষে জনসাধারণের নিকট ঋণ বিনিয়োগ করতে পারে এবং আমানত গ্রহণ করতে পারে। এদের ব্যাংকিং ও ঋণদান নীতিমালা অনেক ব্যাপক। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে কোন ভূমিকা রাখে না। পক্ষান্তরে সমবায় ব্যাংকসমূহ শুধু সদস্যদের মধ্যে সমবায় আইন এবং সমবায় বিভাগের ঋণনীতিসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী ঋণ প্রদান করতে পারে এবং সদস্যদের নিকট হতে আমানত গ্রহণ করতে পারে। ঋণগ্রহীতাগণ ব্যাংকের সদস্য বিধায় সমবায় ব্যাংকের পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ এবং ভূমিকা/বক্তব্য থাকে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর বিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সমবায় ব্যাংকসমূহের কার্যক্রম পরিদর্শন ও নিয়ন্ত্রণ করে।
বাংলাদেশের প্রায় ১,৪৫,০০০ সমবায় সমিতির মধ্যে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী সমবায় ঋণদান সমিতি ঢাকা, একটি সফল সমিতি যা প্রায় বিশ কোটি টাকা সম্পদসমৃদ্ধ। ২০০৯ সালে এই সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪৮০০ জন এবং সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে এবং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪০ সালের দ্য বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটি অ্যাক্ট বাতিলপূর্বক সমবায় সমিতিসমূহ অধ্যাদেশ ১৯৮৪ জারি করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল প্রকার সমবায় সমিতি এই আইন এবং সমবায় বিধিমালা ১৯৮৭-র অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৪৭ সালে ভারতবিভক্তি তথা ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর পূর্ব পাকিস্তানের সমবায়ী জনগণ একটি এ্যাপেক্স ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর ফলে ১৯৪০ সালের দ্য বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটিজ অ্যাক্ট অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৪৮ সালের ৩১ মার্চ তারিখে ইস্ট পাকিস্তান প্রভিনশিয়াল কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর উক্ত ব্যাংকটি জাতীয় মর্যাদা অর্জন করে এবং বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেড নামধারণ পূর্বক সমবায় ব্যাংকিং কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করে। পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৭৭ সালে এর নাম হয় বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড (বিএসবিএল)।
বাংলাদেশের সমবায় পদ্ধতি তিন স্তরবিশিষ্ট যার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি., মধ্যভাগে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় সমিতিসমূহ এবং মাঠপর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক সমিতিসমূহ। বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি.-এর প্রধান কাজ হলো মধ্যভাগে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকসমূহকে অর্থের যোগান দেওয়া, যাতে তারা পুনরায় সে অর্থ প্রাথমিক সমিতিসমূহের নিকট লগ্নি করতে পারে। প্রাথমিক সমিতিসমূহ আবার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকগুলি হতে প্রাপ্ত তহবিল তাদের সদস্যদের মধ্যে ঋণ হিসেবে বিনিয়োগ করে থাকে। দেশের সকল সমবায় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি.-এর সদস্য।
বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা যা প্রতিটি ১,০০০ টাকা মূল্যের ১,০০,০০০টি শেয়ারে বিভক্ত। এর ৪,৫০০টি সাধারণ শেয়ার সরকার কর্তৃক পরিশোধিত, ৫৪,৬৮৭টি শেয়ার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক এবং সমিতিসমূহ দ্বারা ৫০০ টাকা হারে আংশিক পরিশোধিত। অর্থাৎ বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৩.১৮ কোটি টাকা।
কো-অপারেটিভ সোসাইটিজ অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪-র ৩৯(১) ধারা অনুযায়ী সমবায় ব্যাংক-এর সদস্য ব্যতীত অন্যকোন ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করতে পারে না। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৮২। ৩০.৬.৯৮ তারিখে ব্যাংকটির সদস্য সংখ্যার বিভাজন নিম্নরূপ:
ক. কেন্দ্রীয় সমিতিসমূহ: কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক (৭১), কেন্দ্রীয় বহুমুখী সমবায় সমিতি (৪৩), কেন্দ্রীয় ইক্ষুচাষি সমবায় সমিতি (১৬), থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি (৫৩)। খ. প্রাথমিক সমিতিসমূহ: সমবায় জমি বন্ধকী ব্যাংক (৪৩), প্রাথমিক বহুমুখী সমবায় সমিতি (১৫৫), টাউন কো-অপারেটিভ ব্যাংক সোসাইটি (১২), মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি (৩), অন্যান্য সমিতি (৮৬)।
বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি.-এর উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে: ক. সমবায় সেক্টরে শীর্ষ (apex) আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করা; খ. সমবায় সমিতিসমূহের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা; গ. কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকসহ অপরাপর সদস্য সমিতিসমূহের নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের কাজের সমন্বয় সাধন; ঘ. প্রাথমিক সমিতিসমূহের উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণে সহায়তা করা এবং এ সকল উৎপাদিত দ্রব্যাদি সংরক্ষণের জন্য গুদামঘরসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা; ঙ. আওতাভুক্ত/তালিকাভুক্ত সমিতিসমূহকে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান এবং চ. সমবায় আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী সমবায় সমিতিসমূহের সাথে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা।
সমবায় ঋণকাঠামোর প্রাথমিক একক হলো প্রাথমিক ঋণদান সমিতিসমূহ। প্রাথমিক সমিতিসমূহের উদ্দেশ্য হলো কৃষি, বনায়ন, মৎস্য শিকার এবং কুটির শিল্পে নিয়োজিত সমবায়ী সদস্যদের অর্থ যোগান দেওয়া। এ সমিতিগুলি আংশিকভাবে মধ্যস্তরের কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকগুলি কর্তৃক অর্থপুষ্ট হয়ে থাকে। সমবায় জমি বন্ধকী ব্যাংক এবং নগর/শহরভিত্তিক সমবায় ব্যাংকগুলিও প্রাথমিক সমিতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাংকগুলিও তাদের কৃষি এবং কুটির শিল্পে নিয়োজিত সদস্যদেরকে অর্থ যোগান দিয়ে থাকে। তবে আংশিকভাবে এ ব্যাংকগুলি বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি. কর্তৃক অর্থপুষ্ট হয়ে থাকে। এ ধরনের সমিতি বা ব্যাংকের সদস্যপদ কেবল ব্যক্তিসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
সমবায় ব্যাংকিং এবং সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকিং-এর মধ্যে কয়েকটি মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। সমবায় ব্যাংক মূলত কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত নয়। এটি গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহ, বিশেষত কৃষি অর্থায়নে জড়িত। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি তাদের শাখা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রধান কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি. এবং কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকসমূহের প্রত্যেকটি স্ব স্ব ক্ষেত্রে এক একটি স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে পৃথক পৃথক এলাকায় স্বতন্ত্র পরিচালনা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। সমবায় ব্যাংকগুলি সমবায় ভিত্তিতে গঠিত, সমবায় আইনের অধীনে সমবায়ী সদস্যদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এবং সমবায় সমিতিসমূহের নিবন্ধক কর্তৃক নিরীক্ষিত হয়ে থাকে। অপরদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি ব্যাংক কোম্পানি আইনের অধীনে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এবং সরকার কর্তৃক নিয়োজিত বহির্নিরীক্ষক কর্তৃক নিরীক্ষিত হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি নিয়মাচার পালন সাপেক্ষে জনসাধারণের নিকট ঋণ বিনিয়োগ করতে পারে এবং আমানত গ্রহণ করতে পারে। এদের ব্যাংকিং ও ঋণদান নীতিমালা অনেক ব্যাপক। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে কোন ভূমিকা রাখে না। পক্ষান্তরে সমবায় ব্যাংকসমূহ শুধু সদস্যদের মধ্যে সমবায় আইন এবং সমবায় বিভাগের ঋণনীতিসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী ঋণ প্রদান করতে পারে এবং সদস্যদের নিকট হতে আমানত গ্রহণ করতে পারে। ঋণগ্রহীতাগণ ব্যাংকের সদস্য বিধায় সমবায় ব্যাংকের পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ এবং ভূমিকা/বক্তব্য থাকে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর বিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সমবায় ব্যাংকসমূহের কার্যক্রম পরিদর্শন ও নিয়ন্ত্রণ করে।
বাংলাদেশের প্রায় ১,৪৫,০০০ সমবায় সমিতির মধ্যে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী সমবায় ঋণদান সমিতি ঢাকা, একটি সফল সমিতি যা প্রায় বিশ কোটি টাকা সম্পদসমৃদ্ধ। ২০০৯ সালে এই সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪৮০০ জন এবং সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২ কোটি টাকায়।
[এস.এম মাহফুজুর রহমান - বাংলাপিডিয়া]