পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ

পূবালী ব্যাংক লিমিটেড বেসরকারি খাতের একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক। এটি কোম্পানি আইন ১৯১৩-এর অধীনে ১৯৫৯ সালে নিবন্ধিত আধুনালুপ্ত ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড-এর পরিবর্তিত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত এবং পূর্ব পাকিস্তানে কার্যরত বিদেশি ব্যাংক ব্যতীত সকল ব্যাংক Bangladesh Banks (Nationalisation) Order 1972-এর মাধ্যমে জাতীয়করণ করা হয়। ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংককে একই আইনের আওতায় জাতীয়করণ করে তার নাম দেওয়া হয় পূবালী ব্যাংক। পরবর্তীকালে ব্যাংকিং খাতে বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতির অনুবৃত্তিক্রমে Bangladesh Banks (Nationalisation) Order 1972-কে Bangladesh Banks (Nationalisation) Amendment Ordinance 1983-এর মাধ্যমে সংশোধনপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের ৩০ জুন পূবালী ব্যাংকের মালিকানা বেসরকারি মালিকদের নিকট হস্তান্তর করা হয় এবং এর নামকরণ হয় পূবালী ব্যাংক লিমিটেড। দেশব্যাপী শাখা সমুহের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে বৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে ব্যাংকিং সেবায় নিয়েজিত পূবালী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত।

গ্রামীণ অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়ন অর্থাৎ দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং আর্থসামাজিক ক্ষেত্রের পশ্চাৎপদতার অবসানের লক্ষ্যে পূবালী ব্যাংক কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগে সহায়তার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তাছাড়া পূবালী ব্যাংক অবকাঠামো ও শিল্প স্থাপন খাতেও বিনিয়োগে সহায়তা দিয়ে থাকে। ব্যাংক নতুন শিল্প উদ্যোক্তা তৈরিতে উৎসাহ প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। পূবালী ব্যাংক স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে দেশে স্বল্প ব্যয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টির দ্বারা চিকিৎসা খাতে বিদেশে অর্থ ব্যয়ে সাশ্রয় ঘটানোয় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে চলেছে।

পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কাজ আমানত সংগ্রহ, ঋণদান এবং বিভিন্ন উৎপাদনমুখী খাতে অর্থসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা ও বাণিজ্য-সংক্রান্ত লেনদেন নিষ্পত্তি এবং ফি-ভিত্তিক অন্যান্য সেবা প্রদান। ব্যাংকটির ঋণ অগ্রিমের উল্লেখযোগ্য অংশ পাট, টেক্সটাইল, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং বৃহদাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া পূবালী ব্যাংক যোগাযোগ ও পরিবহণ, গৃহায়ন, পল্লী ও শহরাঞ্চলে বিভিন্ন পেশার লোকদেরকে কৃষি, হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসায় ইত্যাদির জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে অর্থায়ন ব্যাংকটির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ৩৬৮টি ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যাংকটি করেসপন্ডেন্ট সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা ও বাণিজ্য সংক্রান্ত লেনদেন এবং রেমিট্যান্স সার্ভিস পরিচালনা করছে। ঋণ ও অগ্রিম ব্যতীত বিভিন্ন প্রকারের সরকারি সিকিউরিটিজ, আয়কর বন্ড, ট্রেজারি বিল, জাতীয় বিনিয়োগ বন্ড, সেতু অর্থায়ন, বন্ড, কোম্পানিসমূহের শেয়ার ও ডিবেঞ্চার ইত্যাদিতে ব্যাংকটি উদ্বৃত্ত তহবিল বিনিয়োগ করে। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯ পর্যন্ত অনুরূপ বিনিয়োগের পরিমাণ ৩,৩১৮ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায়। উক্ত বিনিয়োগসমূহ হতে ব্যাংকটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় করেছে যা ব্যাংকটির সার্বিক উপার্জনক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ১৯৯০ ও ১৯৯১ সাল ব্যতীত ১৯৮৪ সাল-পরবর্তী সকল বছরে পূবালী ব্যাংক নীট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

প্রবাসীদের প্রেরিত বিদেশি মুদ্রা আয়কে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম অবলম্বন এবং এর গুরুত্ব  বিবেচনায় পূবালী ব্যাংক নানা ধরনের গঠনমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ তাদের স্বজনরা যাতে স্বল্প সময়ে বিনা ঝক্কিতে পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সাথে এবং বিশ্বের ৫৭টি প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদন করেছে এবং এসবের মাধ্যমে প্রেরিত টাকা ব্যাংকের ৩৮৬টি শাখায় দ্রুত নিকাশ হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ১০০টি ব্যাংকের সাথে পূবালী ব্যাংক-এর সুইফট সংযোগের সুযোগ রয়েছে। প্রবাসী ওয়েজ আর্নারদের জন্য ব্যাংকের নন রেসিডেন্ট ক্রেডিট স্কিম চালু আছে, এর আওতায় বিদেশে চাকুরীতে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রবাসীরা শহজ শর্তে ঋণ নিতে পারে।

পূবালী ব্যাংক-এর সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালক পর্ষদের ওপর ন্যস্ত। এছাড়া ম্যানেজিং টিমে রয়েছেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জেনারেল ম্যানেজার এবং কনসালট্যান্ট। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাংকের ৪০০টি শাখা আছে।

বিগত পাঁচ বছরে ব্যাংকটি বার্ষিক মুনাফার গড় প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি কর্তৃক ব্যাংকের ২০০৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনার ভিত্তিতে ক্রেডিট রেটিং-এ ডাবল এ অর্জন করেছে পূবালী ব্যাংক। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি পূবালী ব্যাংককে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসার ক্ষেত্রে ডাবল এ থ্রি এবং স্বল্পমেয়াদী লেনেদেনের ক্ষেত্রে এসটি ১ পর্যায়ভুক্ত ঘোষণা করেছে, এর অর্থ হচ্ছে আর্থিক দায় পরিশোধে ব্যাংকটির সক্ষমতা অতি উঁচুতে এবং যেকোন দুর্বিপাকে টিকে থাকার ক্ষেত্রে ব্যাংকটি যুক্তিসংগতভাবে স্বাবলম্বী। এই রেটিং নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংক মুনাফার অব্যাহত উচ্চ প্রবৃদ্ধি, পুঁজির প্রবল উপস্থিতি, তারল্যের সন্তোষজনক স্থিতি, নন পারফর্মিং লোনের ক্রমহ্রাসমান পরিস্থিতি বিশেষভাবে বিবেচনায় আসে। ২০০৮ সালেও ব্যাংকটির ক্রেডিট রেটিং এ ১ ছিল। পূবালী ব্যাংক লিমিটেড ২০০৯ সালের সেরা সফল ব্যাংক হিসেবে ডেইলি স্টার-ডিএইচএল পুরষ্কার, ২০১০ অর্জন করে।
[মোহাম্মদ আবদুল মজিদ - বাংলাপিডিয়া]