ইজারা অর্থ রাজস্ব চুক্তি। মুগল আমলে ইজারা ব্যবস্থা বহাল ছিল। এ সময়ে একজন রাজস্ব চুক্তিকারী, ইজারাদার বা মুসতাজির নামে পরিচিত ছিলেন। মুগল আমলের আঠারো শতকের প্রথমার্ধে খালসা বা খাস জমিও ইজারা প্রথার অধীনে আনা হয়েছিল। মুগল সম্রাটগণ অবশ্য খাস জমি ইজারা দেওয়াকে অনুপ্রাণিত করতেন না এবং সার্বিকভাবে এ সময়ে ইজারা ব্যবস্থার গন্ডিও সীমাবদ্ধ ছিল। সম্রাট বাহাদুর শাহ-এর মৃত্যুর পরই ইজারা ব্যবস্থা, বিশেষ করে বাংলায় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এ ব্যবস্থা রাজস্ব আদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে একটি মধ্যবর্তী নতুন শ্রেণির সৃষ্টি করে, যাঁরা পরবর্তীতে বাংলায় জমিদার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
দিল্লীর সুলতানদের কর্তৃত্বাধীনে ইজারা ব্যবস্থা ভূমি রাজস্ব নির্ভর প্রশাসনের জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে, বিশেষ করে শেরশাহ ও সম্রাট আকবর-এর সময়ে তা স্তিমিত হয়ে যায়। সতেরো শতকে সম্রাট জাহাঙ্গীর-এর (১৬০৫) সময়ে ইজারা ব্যবস্থার পুনঃপ্রচলন হয় এবং তাঁর ব্যাপক বিস্তার ঘটে। সম্রাট শাহজাহান-এর (১৬২৮-১৬৬৬) সময়ে পর্তুগিজ বণিকগণ বাংলার কয়েকটি মহল ইজারা নিয়েছিল। সম্রাট আওরঙ্গজেব-এর শাসনের অষ্টম বৎসরে জারিকৃত একটি ফরমানে রাজস্ব সংক্রান্ত রেকর্ড প্রস্ত্তত করার জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ফরমানের প্রত্যেক গ্রামের কৃষক এবং রাজস্ব চুক্তিকারীর তালিকা প্রস্ত্তত করার জন্য স্থানীয় সরকারকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। এই নির্দেশটি দ্বারা অনুমান করা হয় যে, সে সময়ে প্রত্যেক পরগণায় একজন করে ইজারাদার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তবে প্রত্যেক গ্রামে ইজারাদার থাকা জরুরী ছিল না।
আঠারো শতকের শেষার্ধে রাজস্ব সংক্রান্ত একটি ব্যাখ্যা সম্বলিত সংকলনে ইজারা প্রথা আরোপ ও তার ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে বিস্তারিত গ্রথিত হয়েছিল। এতে ইজারা ব্যবস্থার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিলো যে, এটি মূলত শর্তসাপেক্ষে ভূমি সংক্রান্ত এক প্রকার চুক্তিনামা যা একটি মহল বা একাধিক মহল থেকে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হত এবং চুক্তির শর্তানুযায়ী একজন ইজারাদার নির্দিষ্ট অংকের অর্থ বাৎসরিক হারে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রদান করতেন। ‘রসদ আফসুদ’ নামের আরেক প্রকার ইজারা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিলো। সাধারনত এ চুক্তি গ্রামাঞ্চলের জমি ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে করা হত। এ ক্ষেত্রে বাৎসরিক জমা উৎপাদনের মোট পরিমানের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হত। যেমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে উৎপাদন হ্রাস পেলে সংশ্লিস্ট গ্রামের জমার পমিানও হ্রাস পেতো। এ প্রক্রিয়ায় ‘রসদ আফসুদ’ এর ইজারা প্রদানের ব্যবস্থা ছিল। ইজারাদার এ ক্ষেত্রে মূল চুক্তি অনুযায়ী ‘জমা’র তুলনায় কম অর্থ প্রদান করতে পারতেন।
মুতহাহিদ নামে আরেক প্রকার ইজারা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিলো। উভয় ব্যবস্থার মধ্যে প্রধান পার্থক্য ছিলো এই যে, ইজারা ব্যবস্থার দু’পক্ষের (সরকারপক্ষ বনাম উজারাদার) মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রাজস্ব হিসেবে জমার চুক্তি ব্যতিত অন্য কোনো প্রকার শর্ত আরোপ করা হতো না। ইজারাদার ভূমি-রাজস্ব আদায়ের মধ্যবর্তী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন, কিন্তু মুতাহহিদ পরবর্তী সময়ে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিগণিত হত।
রাষ্ট্রের পক্ষে একজন চুক্তিকারী (জায়গিরদার), নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য নির্দিষ্ট অংকের অর্থ সরকারি কর্মকর্তার নিকট চুক্তির শর্তানুযায়ী আদায় করে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা প্রদানের অধিকার প্রাপ্ত হওয়াই ইজারা ব্যবস্থার মূল কথা। জমির উপর একজন ইজারাদার এর কোনো প্রকার সত্ত্ব আরোপ করার অধিকার ছিলো না এবং এ ক্ষেত্রে একজন মধ্যবর্তী হিসেবে ইজারাদার ছিলেন জমিদার এর থেকে স্বতন্ত্র।
প্রচলিত ইজারা ব্যবস্থার প্রায়োগিক প্রক্রিয়া ভূমি রাজস্ব প্রশাসনের কাজকে প্রভাবিত করেছিলো এবং তার স্থায়িত্বকে দুর্বল করে দিয়েছিলো। কারন এই ব্যবস্থায় বাংলায় একশ্রেণীর অর্থলগ্নিকারকের জন্ম হয় যারা ইজারা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অর্থলগ্নি করতে আরম্ভ করেন। এই শ্রেণির লগ্নিকারকগণ স্বভাবতই নগরাঞ্চল থেকে আসতেন এবং তাঁরা ক্রমাম্নয়ে পূর্ববর্তী জমিদারদের অস্তিত্বের জন্য হুমকির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এ ব্যবস্থা কৃষিজীবীদের জন্য আরো মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। কারণ বর্ধিত রাজস্বের বোঝা তাদের ওপরই আরোপ করা হত। ইজারাদার বা জমিদারদের সঙ্গে ভূমি বন্দোবস্ত যেমনই হোক না কেন, উভয়পক্ষের মধ্যেকার প্রতিযোগিতামূলক আচরণে (কৃত্রিমভাবে) সৃষ্ট অব্যবস্থার কারনে ভুমি রাজস্বের অংক বেড়ে যেতো এবং তার ভার কৃষকের উপর পড়তো। স্বাভাবিকভাবেই শোষিত কৃষক তাদের নিকটবর্তী জমিদার-এর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতো। যে সকল জমিদার রাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধিতা করে শক্ত অবস্থানে থাকতেন, তাঁরা রাজস্ব প্রদানে সরাসরি অস্বীকৃতি জানাতেন। রাষ্ট্রের কর্তৃত্বাধীন যে সকল খালসা (খালিসা শরিফা) বা খাস জমি নিয়ে মহল এবং পরগণা সৃষ্টি হয়েছিলো তা রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী মনসবদারদের নিকট পত্তন দেয়া হয়।
১৭২২ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলী খান নতুন ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ইজারা ব্যবস্থাকে আরো কার্যকর করেন। তাঁর সময়ে কিছু নতুন বড় জমিদারীর উত্থান হয় এবং সাধারণত হিন্দুরাই জমিদার হিসেবে অগ্রাধিকার পেত। তিনি তাঁর রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য দ্বিমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রথমত বাংলার খালসার দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল জায়গীরকে সরাসরি রাষ্ট্রের রাজস্ব আদায়কারীর অধীনে নিয়ে আসেন। দ্বিতীয়ত তিনি ইজারা প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহের জন্য চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তিনি অবশ্য ইজারাদারদের নিকট থেকে নিরাপত্তা অঙ্গীকার পত্রের বিনিময়ে রাজস্ব আদায়ের চুক্তি স্বাক্ষর করতেন। তাঁর এ ব্যবস্থাকে বলা হত ‘মালদামিনি’ বা ‘মালজামিনি’ (মাল বা সম্পত্তির জামিন নেয়া) ব্যবস্থা। তিনি এই প্রক্রিয়ায় বাংলায় একটি ভূমিনির্ভর সম্ভ্রান্ত বা অভিজাত শ্রেণির সৃষ্টি করেন। ইজারাদারদের পরবর্তী বংশধরদের অনেকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তর (১৭৯৩) মাধ্যমে বাংলার স্থায়ী জমিদারে পরিণত হয়েছিল। ইংরেজ শাসনামলে সরকার নিয়ন্ত্রিত হাটবাজার, জলমহাল প্রভৃতিও ইজারা দেয়া হত।
দিল্লীর সুলতানদের কর্তৃত্বাধীনে ইজারা ব্যবস্থা ভূমি রাজস্ব নির্ভর প্রশাসনের জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে, বিশেষ করে শেরশাহ ও সম্রাট আকবর-এর সময়ে তা স্তিমিত হয়ে যায়। সতেরো শতকে সম্রাট জাহাঙ্গীর-এর (১৬০৫) সময়ে ইজারা ব্যবস্থার পুনঃপ্রচলন হয় এবং তাঁর ব্যাপক বিস্তার ঘটে। সম্রাট শাহজাহান-এর (১৬২৮-১৬৬৬) সময়ে পর্তুগিজ বণিকগণ বাংলার কয়েকটি মহল ইজারা নিয়েছিল। সম্রাট আওরঙ্গজেব-এর শাসনের অষ্টম বৎসরে জারিকৃত একটি ফরমানে রাজস্ব সংক্রান্ত রেকর্ড প্রস্ত্তত করার জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ফরমানের প্রত্যেক গ্রামের কৃষক এবং রাজস্ব চুক্তিকারীর তালিকা প্রস্ত্তত করার জন্য স্থানীয় সরকারকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। এই নির্দেশটি দ্বারা অনুমান করা হয় যে, সে সময়ে প্রত্যেক পরগণায় একজন করে ইজারাদার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তবে প্রত্যেক গ্রামে ইজারাদার থাকা জরুরী ছিল না।
আঠারো শতকের শেষার্ধে রাজস্ব সংক্রান্ত একটি ব্যাখ্যা সম্বলিত সংকলনে ইজারা প্রথা আরোপ ও তার ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে বিস্তারিত গ্রথিত হয়েছিল। এতে ইজারা ব্যবস্থার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিলো যে, এটি মূলত শর্তসাপেক্ষে ভূমি সংক্রান্ত এক প্রকার চুক্তিনামা যা একটি মহল বা একাধিক মহল থেকে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হত এবং চুক্তির শর্তানুযায়ী একজন ইজারাদার নির্দিষ্ট অংকের অর্থ বাৎসরিক হারে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রদান করতেন। ‘রসদ আফসুদ’ নামের আরেক প্রকার ইজারা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিলো। সাধারনত এ চুক্তি গ্রামাঞ্চলের জমি ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে করা হত। এ ক্ষেত্রে বাৎসরিক জমা উৎপাদনের মোট পরিমানের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হত। যেমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে উৎপাদন হ্রাস পেলে সংশ্লিস্ট গ্রামের জমার পমিানও হ্রাস পেতো। এ প্রক্রিয়ায় ‘রসদ আফসুদ’ এর ইজারা প্রদানের ব্যবস্থা ছিল। ইজারাদার এ ক্ষেত্রে মূল চুক্তি অনুযায়ী ‘জমা’র তুলনায় কম অর্থ প্রদান করতে পারতেন।
মুতহাহিদ নামে আরেক প্রকার ইজারা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিলো। উভয় ব্যবস্থার মধ্যে প্রধান পার্থক্য ছিলো এই যে, ইজারা ব্যবস্থার দু’পক্ষের (সরকারপক্ষ বনাম উজারাদার) মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রাজস্ব হিসেবে জমার চুক্তি ব্যতিত অন্য কোনো প্রকার শর্ত আরোপ করা হতো না। ইজারাদার ভূমি-রাজস্ব আদায়ের মধ্যবর্তী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন, কিন্তু মুতাহহিদ পরবর্তী সময়ে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিগণিত হত।
রাষ্ট্রের পক্ষে একজন চুক্তিকারী (জায়গিরদার), নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য নির্দিষ্ট অংকের অর্থ সরকারি কর্মকর্তার নিকট চুক্তির শর্তানুযায়ী আদায় করে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা প্রদানের অধিকার প্রাপ্ত হওয়াই ইজারা ব্যবস্থার মূল কথা। জমির উপর একজন ইজারাদার এর কোনো প্রকার সত্ত্ব আরোপ করার অধিকার ছিলো না এবং এ ক্ষেত্রে একজন মধ্যবর্তী হিসেবে ইজারাদার ছিলেন জমিদার এর থেকে স্বতন্ত্র।
প্রচলিত ইজারা ব্যবস্থার প্রায়োগিক প্রক্রিয়া ভূমি রাজস্ব প্রশাসনের কাজকে প্রভাবিত করেছিলো এবং তার স্থায়িত্বকে দুর্বল করে দিয়েছিলো। কারন এই ব্যবস্থায় বাংলায় একশ্রেণীর অর্থলগ্নিকারকের জন্ম হয় যারা ইজারা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অর্থলগ্নি করতে আরম্ভ করেন। এই শ্রেণির লগ্নিকারকগণ স্বভাবতই নগরাঞ্চল থেকে আসতেন এবং তাঁরা ক্রমাম্নয়ে পূর্ববর্তী জমিদারদের অস্তিত্বের জন্য হুমকির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এ ব্যবস্থা কৃষিজীবীদের জন্য আরো মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। কারণ বর্ধিত রাজস্বের বোঝা তাদের ওপরই আরোপ করা হত। ইজারাদার বা জমিদারদের সঙ্গে ভূমি বন্দোবস্ত যেমনই হোক না কেন, উভয়পক্ষের মধ্যেকার প্রতিযোগিতামূলক আচরণে (কৃত্রিমভাবে) সৃষ্ট অব্যবস্থার কারনে ভুমি রাজস্বের অংক বেড়ে যেতো এবং তার ভার কৃষকের উপর পড়তো। স্বাভাবিকভাবেই শোষিত কৃষক তাদের নিকটবর্তী জমিদার-এর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতো। যে সকল জমিদার রাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধিতা করে শক্ত অবস্থানে থাকতেন, তাঁরা রাজস্ব প্রদানে সরাসরি অস্বীকৃতি জানাতেন। রাষ্ট্রের কর্তৃত্বাধীন যে সকল খালসা (খালিসা শরিফা) বা খাস জমি নিয়ে মহল এবং পরগণা সৃষ্টি হয়েছিলো তা রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী মনসবদারদের নিকট পত্তন দেয়া হয়।
১৭২২ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলী খান নতুন ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ইজারা ব্যবস্থাকে আরো কার্যকর করেন। তাঁর সময়ে কিছু নতুন বড় জমিদারীর উত্থান হয় এবং সাধারণত হিন্দুরাই জমিদার হিসেবে অগ্রাধিকার পেত। তিনি তাঁর রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য দ্বিমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রথমত বাংলার খালসার দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল জায়গীরকে সরাসরি রাষ্ট্রের রাজস্ব আদায়কারীর অধীনে নিয়ে আসেন। দ্বিতীয়ত তিনি ইজারা প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহের জন্য চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তিনি অবশ্য ইজারাদারদের নিকট থেকে নিরাপত্তা অঙ্গীকার পত্রের বিনিময়ে রাজস্ব আদায়ের চুক্তি স্বাক্ষর করতেন। তাঁর এ ব্যবস্থাকে বলা হত ‘মালদামিনি’ বা ‘মালজামিনি’ (মাল বা সম্পত্তির জামিন নেয়া) ব্যবস্থা। তিনি এই প্রক্রিয়ায় বাংলায় একটি ভূমিনির্ভর সম্ভ্রান্ত বা অভিজাত শ্রেণির সৃষ্টি করেন। ইজারাদারদের পরবর্তী বংশধরদের অনেকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তর (১৭৯৩) মাধ্যমে বাংলার স্থায়ী জমিদারে পরিণত হয়েছিল। ইংরেজ শাসনামলে সরকার নিয়ন্ত্রিত হাটবাজার, জলমহাল প্রভৃতিও ইজারা দেয়া হত।
[নাসরীন আক্তার - বাংলাপিডিয়া]