বৈদেশিক মুদ্রা মজুত একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতকে বুঝায় যা বৈদেশিক খাতে প্রাপ্তি এবং প্রদানে ভারসাম্যহীনতা লাঘবের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে দেশের বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুত তরল সম্পদরূপে সংরক্ষণ করে থাকে। স্বাধীনতার দু-তিন বছর পর পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুত বৈদেশিক সাহায্য/অনুদান এবং রপ্তানি আয় দ্বারা গঠিত ছিল। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণ এবং রপ্তানি খাতের ভিত্তি সম্প্রসারণে সমর্থ হয়। বাংলাদেশ নতুন বাণিজ্য এলাকায় অনুপ্রবেশ করে রপ্তানি বাণিজ্যকে ভৌগোলিকভাবে সম্প্রসারণ করে। রপ্তানি আয় ক্রমান্বয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের প্রধান উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিটেন্স স্কিম চালু করে যা ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের একটি উল্লেখযোগ্য উৎসে পরিণত হয়। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তহবিল হতে বিভিন্ন সুবিধার আওতায় অর্থনৈতিক সাহায্য পেয়ে থাকে যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ উক্ত তহবিল থেকে এসডিআর বরাদ্দ পেয়ে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পরিমাণ আমদানি ব্যয় পরিশোধ, বৈদেশিক দায় পরিশোধ এবং বিদেশি নাগরিকদের উৎপাদন নির্বাহ খরচের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। জনসাধারণের বিদেশ ভ্রমণ, বিদেশে শিক্ষা গ্রহণ, প্রশিক্ষণ এবং চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রিত আমদানি নীতি অনুসরণ এবং অপ্রতুল বৈদেশিক মুদ্রা সীমিতভাবে বণ্টন করে আসছে। অর্থনৈতিক সংস্কার এবং উদারীকরণ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রিত নীতির পরিবর্তে ক্রমশ উদারনীতি গ্রহণ করা হয়।
একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের পরিমাণ উক্ত দেশের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের পরিস্থিতি, মজুত হ্রাসের গতি, মজুত সংরক্ষণের বিকল্প ব্যয় এবং আন্তর্জাতিক তারল্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ হতে রপ্তানিযোগ্য প্রাথমিক পণ্যের যোগান স্বল্পকালীন সময়ে অপরিবর্তনশীল থাকে। বস্ত্তত দেশটির শিল্পজাত ভোগ্যপণ্যের যোগান, যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। আমদানি পণ্যের মূল্য প্রায়ই ওঠানামা করে এবং ফলে লেনদেন পরিস্থিতি চাপের মধ্যে থাকে। অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যথা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি বা খরাজনিত কারণ যেমন দেশের লেনদেন ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে তেমনি আন্তর্জাতিক কারণ, যথা রপ্তানি পণ্যের মূল্য হ্রাস অথবা আমদানি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এ জন্য দায়ী।
আন্তর্জাতিক তারল্যপ্রবাহ, বিশেষ করে বাণিজ্য ঋণসুবিধার কাছে বাংলাদেশের সহজ প্রবেশাধিকার নেই এবং বিদেশি দায় মেটানোর জন্য সরকারি উৎস হতে বিভিন্ন শর্তাধীনে তহবিল প্রদান করা হয়। এ কারণে বাংলাদেশকে একটি যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতে হয় যা অন্ততপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম। যদিও রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে তথাপি মজুত একই হারে বৃদ্ধি পায় নি। ১৯৮১-৮২ সালে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল সর্বনিম্ন ১২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা একমাসের আমদানি ব্যয়ের চেয়েও কম ছিল। দেশের রপ্তানি পণ্যের মূল্য হ্রাস, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল কর্তৃক সম্প্রসারিত তহবিল সুবিধা কার্যক্রম (ইএফএফ) স্থগিতকরণ এবং বৈদেশিক সাহায্য হ্রাসকৃতহারে অবমুক্তির ফলেই এরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের এপ্রিল মাসে বৈদেশিক মুদ্রা মজুত ওঠানামার মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ৩.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয় এবং তারপর ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে রিজার্ভে হ্রাস পেয়ে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায় যা ২-৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান।
বাংলাদেশের বৈদেশিক খাতের সক্ষমতা বজায় রাখা, রেমিটেন্সের আন্তঃপ্রবাহকে উৎসাহীকরণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখার জন্য ২০০৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশ তার মুদ্রাকে ভাসমান ঘোষণা করে। তখন থেকে অনুমোদিত ডিলারগণ আন্তঃব্যাংক লেনদেন এবং অ-ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য তাদের নিজস্ব স্পট ও ফরওয়ার্ড বিনিময় হার স্বাধীনভাবে নির্ধারণ করে আসছে। অধিকন্তু বাংলাদেশি টাকার ভাসমান বিনিময় ব্যবস্থা চালুর পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া ও কৌশলে অনেক পরিবর্তন আনা হয় যা মূলত আর্থিক বাজারের বিভিন্ন ঘটনাবলী এবং নীতিগত কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও কৌশলের জন্য মূল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে দেশের মুদ্রানীতি, চলতি হিসাবের ভারসাম্য, বৈদেশিক ঋণের অবস্থা এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি।
৩০ জুন ২০১০ পর্যন্ত বিগত এক দশকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। ২০০১ সালের সর্বনিম্ন ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে নভেম্বর ২০০৯ মাসে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করে। রপ্তানি আয়ের ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি এবং বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থের প্রবল প্রবৃদ্ধি এতে অবদান রাখে। ৩০ জুন ২০১০ তারিখে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা গত ৯ বছরে চক্রবৃদ্ধিহারে শতকরা বার্ষিক ২৩ ভাগ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। এ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রর মজুদ দেশের প্রায় ৬ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ। বাংলাদেশ তার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে মোট মজুদকে বহুমুখীকরণপূর্বক আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন ও আন্তর্জাতিক ক্রেডিট এজেন্সির রেটিং-এর ভিত্তিতে নির্বাচিত উৎকৃষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিকট জমা রাখে। বিনিময় হারের উঠানামার ঝুকি নিরসনের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুদকে বেশ কয়েকটি দেশের মুদ্রায় সংরক্ষণ করা হয়। তারল্য সংক্রান্ত বিধিনিষেধ, তারল্য সংক্রান্ত ঋণ ঝুকি বিবেচনায় বাংলাদেশ তার আন্তর্জাতিক পোর্টফোলিওকে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে ট্রেজারি বিল, রেপো এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে প্রচলিত অন্যান্য স্বল্প মেয়াদি হাতিয়ার ও কর্পোরেট বন্ডে ধারণ করে। উল্লেখ্য অর্থবছর ২০০৮-এ বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক, ইউ.এস সাব-প্রাইম ঋণ সৃষ্ট ধ্বসের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাংকসমূহে রক্ষিত বিনিয়োগকৃত মজুদের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে এবং ক্ষতি এড়াতে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যেসমস্ত ব্যাংক পরবর্তিতে দেউলিয়া হয়ে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরিভিত্তিতে ঐসব ব্যাংক থেকে মজুদ তুলে নেয় এবং কতিপয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তা জমা করে। পরবর্তীকালে এ পদক্ষেপ বেশ কার্যকর এবং ফলপ্রসু প্রমাণিত হয়।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিটেন্স স্কিম চালু করে যা ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের একটি উল্লেখযোগ্য উৎসে পরিণত হয়। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তহবিল হতে বিভিন্ন সুবিধার আওতায় অর্থনৈতিক সাহায্য পেয়ে থাকে যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ উক্ত তহবিল থেকে এসডিআর বরাদ্দ পেয়ে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পরিমাণ আমদানি ব্যয় পরিশোধ, বৈদেশিক দায় পরিশোধ এবং বিদেশি নাগরিকদের উৎপাদন নির্বাহ খরচের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। জনসাধারণের বিদেশ ভ্রমণ, বিদেশে শিক্ষা গ্রহণ, প্রশিক্ষণ এবং চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রিত আমদানি নীতি অনুসরণ এবং অপ্রতুল বৈদেশিক মুদ্রা সীমিতভাবে বণ্টন করে আসছে। অর্থনৈতিক সংস্কার এবং উদারীকরণ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রিত নীতির পরিবর্তে ক্রমশ উদারনীতি গ্রহণ করা হয়।
একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের পরিমাণ উক্ত দেশের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের পরিস্থিতি, মজুত হ্রাসের গতি, মজুত সংরক্ষণের বিকল্প ব্যয় এবং আন্তর্জাতিক তারল্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ হতে রপ্তানিযোগ্য প্রাথমিক পণ্যের যোগান স্বল্পকালীন সময়ে অপরিবর্তনশীল থাকে। বস্ত্তত দেশটির শিল্পজাত ভোগ্যপণ্যের যোগান, যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। আমদানি পণ্যের মূল্য প্রায়ই ওঠানামা করে এবং ফলে লেনদেন পরিস্থিতি চাপের মধ্যে থাকে। অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যথা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি বা খরাজনিত কারণ যেমন দেশের লেনদেন ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে তেমনি আন্তর্জাতিক কারণ, যথা রপ্তানি পণ্যের মূল্য হ্রাস অথবা আমদানি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এ জন্য দায়ী।
আন্তর্জাতিক তারল্যপ্রবাহ, বিশেষ করে বাণিজ্য ঋণসুবিধার কাছে বাংলাদেশের সহজ প্রবেশাধিকার নেই এবং বিদেশি দায় মেটানোর জন্য সরকারি উৎস হতে বিভিন্ন শর্তাধীনে তহবিল প্রদান করা হয়। এ কারণে বাংলাদেশকে একটি যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতে হয় যা অন্ততপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম। যদিও রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে তথাপি মজুত একই হারে বৃদ্ধি পায় নি। ১৯৮১-৮২ সালে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল সর্বনিম্ন ১২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা একমাসের আমদানি ব্যয়ের চেয়েও কম ছিল। দেশের রপ্তানি পণ্যের মূল্য হ্রাস, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল কর্তৃক সম্প্রসারিত তহবিল সুবিধা কার্যক্রম (ইএফএফ) স্থগিতকরণ এবং বৈদেশিক সাহায্য হ্রাসকৃতহারে অবমুক্তির ফলেই এরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের এপ্রিল মাসে বৈদেশিক মুদ্রা মজুত ওঠানামার মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ৩.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয় এবং তারপর ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে রিজার্ভে হ্রাস পেয়ে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায় যা ২-৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান।
বাংলাদেশের বৈদেশিক খাতের সক্ষমতা বজায় রাখা, রেমিটেন্সের আন্তঃপ্রবাহকে উৎসাহীকরণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখার জন্য ২০০৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশ তার মুদ্রাকে ভাসমান ঘোষণা করে। তখন থেকে অনুমোদিত ডিলারগণ আন্তঃব্যাংক লেনদেন এবং অ-ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য তাদের নিজস্ব স্পট ও ফরওয়ার্ড বিনিময় হার স্বাধীনভাবে নির্ধারণ করে আসছে। অধিকন্তু বাংলাদেশি টাকার ভাসমান বিনিময় ব্যবস্থা চালুর পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া ও কৌশলে অনেক পরিবর্তন আনা হয় যা মূলত আর্থিক বাজারের বিভিন্ন ঘটনাবলী এবং নীতিগত কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও কৌশলের জন্য মূল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে দেশের মুদ্রানীতি, চলতি হিসাবের ভারসাম্য, বৈদেশিক ঋণের অবস্থা এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি।
৩০ জুন ২০১০ পর্যন্ত বিগত এক দশকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। ২০০১ সালের সর্বনিম্ন ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে নভেম্বর ২০০৯ মাসে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করে। রপ্তানি আয়ের ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি এবং বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থের প্রবল প্রবৃদ্ধি এতে অবদান রাখে। ৩০ জুন ২০১০ তারিখে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা গত ৯ বছরে চক্রবৃদ্ধিহারে শতকরা বার্ষিক ২৩ ভাগ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। এ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রর মজুদ দেশের প্রায় ৬ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ। বাংলাদেশ তার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে মোট মজুদকে বহুমুখীকরণপূর্বক আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন ও আন্তর্জাতিক ক্রেডিট এজেন্সির রেটিং-এর ভিত্তিতে নির্বাচিত উৎকৃষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিকট জমা রাখে। বিনিময় হারের উঠানামার ঝুকি নিরসনের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুদকে বেশ কয়েকটি দেশের মুদ্রায় সংরক্ষণ করা হয়। তারল্য সংক্রান্ত বিধিনিষেধ, তারল্য সংক্রান্ত ঋণ ঝুকি বিবেচনায় বাংলাদেশ তার আন্তর্জাতিক পোর্টফোলিওকে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে ট্রেজারি বিল, রেপো এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে প্রচলিত অন্যান্য স্বল্প মেয়াদি হাতিয়ার ও কর্পোরেট বন্ডে ধারণ করে। উল্লেখ্য অর্থবছর ২০০৮-এ বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক, ইউ.এস সাব-প্রাইম ঋণ সৃষ্ট ধ্বসের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাংকসমূহে রক্ষিত বিনিয়োগকৃত মজুদের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে এবং ক্ষতি এড়াতে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যেসমস্ত ব্যাংক পরবর্তিতে দেউলিয়া হয়ে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরিভিত্তিতে ঐসব ব্যাংক থেকে মজুদ তুলে নেয় এবং কতিপয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তা জমা করে। পরবর্তীকালে এ পদক্ষেপ বেশ কার্যকর এবং ফলপ্রসু প্রমাণিত হয়।
[সৈয়দ আহমেদ খান এবং এ.সামাদ সরকার - বাংলাপিডিয়া]