ভাসমান দ্বীপের কথা আপনি শুনেছেন। শুনেছেন ভাসমান বিমান বন্দরের কথাও। এমনকি ভাসমান স্টেডিয়ামও আছে থাইল্যান্ডে। ভাসমান গ্রামও আছে পূর্ব এশিয়ায়। তাই বলে ভাসমান শহর! শহরের জীবন অনেকের কাছেই একঘেয়ে। সেই একই রুটিন। একই পথ চলা। একই কাজ। একই বাসা। একই আবহাওয়া ঘুরে ফিরে সারা বছর। কিন্তু যদি শহরটা একই থাকে, কিন্তু আকাশটা হয় ভিন্ন, দেশটা হয় ভিন্ন, তবে কেমন হয়? এমন শহর কি পাওয়া যাবে? পাওয়া যাবে। এমন একটা শহরই গড়ার পরিকল্পনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম শিপ ইন্টারন্যাশনাল। এমন একটি শহর যা সাগর পথে পুরো বিশ্ব ঘুরে বেড়াবে, দেশ থেকে দেশে ভেসে বেড়াবে। কিছুতেই আপনি একঘেয়েমিতে আক্রান্ত হবেন না। আর এ সুযোগটিই এনে দিয়েছে ‘ফ্রিডম শিপ’ নামে একটি জাহাজ, যেটাকে বিশ্বের প্রথম ভাসমান শহরের স্বীকৃতিও দেয়া হচ্ছে। তবে তা এখনো পরিকল্পনাধীন। জাহাজটির ডিজাইনাররা এটির কম্পিউটার প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা ছবি প্রদর্শন করেছেন, যা থেকে জানা যায় জাহাজটি লম্বায় এক দশমিক চার মাইল। ২৫ তলার এই জাহাজটিতে ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করতে পারবে। এখানে থাকবে স্কুল, হাসপাতাল, আর্ট গ্যালারি, দোকান, পার্ক, একুরিয়াম ও ক্যাসিনো। এমনকি জাহাজটির একটি নিজস্ব বিমানবন্দর ও রানওয়ে থাকবে, যাতে ছোট ছোট ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক বিমান ৪০ জন যাত্রী নিয়ে উঠা-নামা করতে পারবে।
ফ্রিডম শিপ ইন্টারন্যাশনাল-এর পরিচালক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রজার এম গুচ বলেন, ‘এই জাহাজটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ ও ভাসমান শহরও।’ আর পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে খরচ হবে ১০ বিলিয়ন ডলার। সৌর ও বায়ু শক্তি দিয়ে এই জাহাজটি পরিচালিত হবে। এটি আমেরিকার পুর্ব উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করে আটলান্টিক সাগর দিয়ে ইউরোপে যাবে ও ভূ-মধ্যসাগরেও প্রবেশ করবে। এরপর এটি আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ হয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়াতে। পূর্ব এশিয়া হয়ে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে শীতকালে এটি পৌঁছবে উত্তর আমেরিকার উত্তর উপকূলে। এরপর গ্রীষ্মকালে যাবে দক্ষিণ আমেরিকায়। ভাসমান শহরটি ৩৫০ ফুট উঁচু। আর দৈর্ঘ্য চার হাজার ফুট। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহাজ হচ্ছে কুইন মেরি-২ ক্রুজ। এর চেয়েও তিনগুণ বড় ফ্রিডম শিপ।
পৃথিবীর প্রথম ভাসমান শহর হিসেবে হয়ত অচিরেই সাগরের বুকে ঠাই নেমে ফ্রিডম শিপ। কিন্তু দিন দিন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। সাগরে তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে মালদ্বীপের মতো নিচু দেশগুলো। এর মধ্যেই পৃথিবীর অনেক জায়গা ডুবে গেছে। আরো কিছু অচিরেই হয়তো তলিয়ে যাবে। এমনকি তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে বাংলাদেশের ঊপকূলীয় অঞ্চলগুলোও। তখন ওসব অঞ্চলে বাস করা মানুষ কোথায় যাবে? কোথায় আশ্রয় মিলবে তাদের? ফ্রিডম শিপের কারণে কিছু মানুষের বিনোদন হবে। বিনোদনে বিশেষ বৈচিত্রও আসবে। বিশেষ করে ধনী দেশগুলোর ধনী গোষ্ঠীর। অথচ ওদের জন্যই দরিদ্র দেশগুলো তলিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে রয়েছে। কাজেই এমন ভাসমান শহর তো আসলে দরকার সাগরে তলিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে থাকা দেশগুলোর। এমন ভাসমান শহর তো এসব অঞ্চলে খুব বেশি প্রয়োজন। ধনীদের মতো বিনোদন বৈচিত্রের জন্য নয়, বেঁচে থাকার জন্য।