দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পশু ওমব্যাট। খরগোশের মত দেখতে দেখতে এই প্রাণীটি গাছের শিকড়, ঘাস, পাতা খেয়ে বাঁচে। ক্যাঙারুর মতো এরা পেটের থলিতে বাচ্চা বহন করে। লম্বায় প্রায় ৩৯ ইঞ্চি। খুব দ্রুত বংশ বিস্তারে সক্ষম। তারপরও এরা বর্তমানে হুমকির মুখে। কুইন্সল্যান্ডের ৭৫০ একর জমিতে বনায়ন করে সেখানে এদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হেয়ারি নোজড ওমব্যাট নামেই এদের পরিচিতি। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ওমব্যাটের নাম হল সাউদার্ন হেয়ারি নোজন ওমব্যাট আর উত্তর অস্ট্রেলিয়ার ওমব্যাটকে বলে নর্দান হেয়ারি নোজন ওমব্যাট । অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কাছে ওমব্যাটের গুরুত্ব অনেক বেশি। শিকারের সময় তাই নিজেদের এলাকার শিকার না করে তারা অন্য এলাকার ওমব্যাট শিকার করে। এদিকে কৃষকেরা মনে করে ওমব্যাট একটি ক্ষতিকর প্রাণী। ধারাল মুখ দিয়ে এরা সমানে মাটি খুঁড়ে ফেলতে পারে। এজন্য তাদের নাম দেয়া হয়েছে ‘বুলডোজার অব দ্যা বুশ’। মুখ দিয়ে খুঁড়ে এরা ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে এবং ক্ষেতের ফসল সাবাড় করে। ফলে কৃষকেরা এদের যেখানে পায় সেখানেই মারে। নানাবিধ কারণে পৃথিবী থেকে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার কৃষকদের রোষানলে পড়ে হেয়ারি নোজড ওমব্যাটও আজ বিলুপ্তির পথে।
সেন্টজর্জের শিকার নিষিদ্ধ এলাকাটিও এদের আর একটি উপনিবেশ। বর্তমানে সেখানে ১৩১ প্রজাতির হেয়ারি নোজড ওমব্যাট আছে। শিকাগোর বুকফিল্ড চিড়িয়াখানায় একটি পুরুষ ওমব্যাট ৩৪ বছর এবং স্ত্রী ওমব্যাট ২৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার রেকর্ড পাওয়া গেছে।
ওমব্যাট ডে: জন্ম নেয়ার পর ছোট্ট ওমব্যাট ছানাটি বড়ই অসহায় থাকে। সে হাঁটতে পারে না, চলতে পারে না। খেতেও পারে না। এমনি অবস্থায় মায়ের সাহায্য ছাড়া বেঁচে থাকা শিশু ওমব্যাটের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। মায়ের পেটে থাকে একটি থলি সেই থলিতে করে মা দীর্ঘ ৫ মাস তাকে নিজের শরীরের সাথে আটকে রাখে। নিজের বুকের দুধ খাওয়ায়, শত্র“র হাত থেকে তাকে রক্ষা করে। ৫ মাস পরে যখন সে নিজে চলাফেরা করতে শেখে তারপর আরো দু’মাস মা তাকে কাছাকাছি রেখে সব কিছু শিখিয়ে দেয়। কীভাবে পায়ের নখ দিয়ে মাটি খুঁড়ে বাসা বাঁধতে হয়, কীভাবে ঘাস আর গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়, কীভাবে শত্র“র হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হয়- সব কিছ্ইু মা তাকে শিখিয়ে দেয়। অর্থাৎ জন্মের পর থেকে একটি ওমব্যাটের স্বাধীনভাবে চলাচলের জন্য অন্তত ৭ মাস সময় লেগে যায়।
নিশাচর প্রাণী ওমব্যাট। সারাদিন গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। সন্ধে হলে বের হয় খাবারের সন্ধানে। এই প্রাণীটির অপরাধ তাদের ধারাল, শক্ত মুখ দিয়ে সমানে মাটি খুঁড়ে ফেলতে পারে। তাতে নষ্ট হয় ফসলের ক্ষেত এবং ক্ষতি হয় ক্ষেতের ফসল। সেই জন্য অস্ট্রেলিয়ার কৃষকের কাছে ওমব্যাট একটি ক্ষতিকর প্রাণী। তারা তাদের ফসল রক্ষা করতে ওমব্যাটকে হত্যা করছে। এভাবে ওমব্যাট মারার কারণে নর্দান হেয়ারি নোজড ওমব্যাটটি আজ সেখানে মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে। তাদের রক্ষার জন্য ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় গঠিত হয়েছে ‘গ্রান্ড ওমব্যাট কাউন্সিল’। এই কাউন্সিল এদের গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছে। ওমব্যাট দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক। এই প্রাণীটি আজ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এখনই এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে না পারলে ডাইনোসরের মতো এরাও হয়তো একদিন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। এখনই তাদের রক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। তাই জনগণকে সচেতন করার জন্য প্রতি বছর অক্টোবর মাসের ২২ তারিখকে তারা ‘ওমব্যাট ডে’ ঘোষণা করেছে। ২০০৫ সাল থেকে দিনটি উদযাপিত হয়ে আসছে। ২২ অক্টোবর ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হল ৯ম ‘ওমব্যাট ডে’। ওমব্যাট সঙ্গীত সন্ধ্যা, ওমব্যাট গল্প বলার আসর, ওমব্যাট রূপকথা, ওমব্যাট নৃত্য ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে আগত অতিথিদের জন্য তারা ওমব্যাট ডে কেক, ক্যান্ডি, মিষ্টি ইত্যাদি খাবারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান যেভাবেই উদযাপিত হউক না কেন। উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হল- মারাত্মক হুমকির মুখে পড়া ওমব্যাট যেন স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারে তার জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।