নাহ, বউ নিয়ে দৌড়ের তো আর কমতি নেই! বিশেষ করে এই উপমহাদেশে। আরো বিশেষ করে বললে বাংলাদেশে। এখনও দেশের বেশির ভাগ পরিবারই স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল। যদিও অনেক বউ এখন এগিয়ে আসছেন। স্বামীর পাশাপাশি সংসারে আয়-রোজগার বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। কেউ ব্যবসা করছেন, কেউ চাকরি। কেউ আবার ঘরে থেকেই নানান শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। সেটা ছোট হোক বা বড় হোক- কাজ করে যাচ্ছেন। তবু দেশের সবচেয়ে বেশি পরিবারে, বউরা সেই অর্থে অর্থ উপার্জনের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে এ নিয়ে কিন্তু অন্যরকম অভিমত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। আর সেটা হচ্ছে, চোখে দেখা যায় না এমন উৎপাদনশীল কাজেও বাংলাদেশের স্ত্রীরা সম্পৃক্ত। যেমন রান্না করা, ছেলেপুলে লালন পালন করা, ঘর-সংসার সামলানো ইত্যাদি। সে যাই হোক, তাই বলে বউ নিয়ে দৌড় দিতে হবে কেন?
এমনি এমনি নয়। এটাই এক ধরনের প্রতিযোগিতা। বউকে কাঁধে নিয়ে দৌড়। বউ নিয়ে দৌড়ের বেশ কয়েকটি আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগিতা হয়। তবে সবচেয়ে জমকালো অনুষ্ঠানটা হয় ফিনল্যান্ডে। অনেকে মনে করেন ফিনল্যান্ডই হচ্ছে বউ নিয়ে দৌড়ের আদি জায়গা। এর পিছনে একটা গল্পও আছে। ঘটনাটা ১৮ শতকের। হেরকো নামে এক লোক বাস করতেন বনে। একটা ডাকাত দলের সঙ্গে যুক্ত। বনে থেকে তো খাবার-দাবার জোগানো যায় না। কাজেই ডাকাত দলটি প্রায়ই আশপাশের গ্রামে হামলা চালাত। খাবার আর নিত্য দরকারি জিনিসপত্র তো চুরি করতই, গ্রামবাসীদের বউদেরও ঘাড়ে করে নিয়ে আসত। যাকে বলে আরেকজনের বউ চুরি। আর এই বউ চুরিতে তার দলের সবচেয়ে শক্তসামর্থ মানে যে সবার আগে নিয়ে আসত পারত, তাকে পুরস্কৃত করা হত। সেটাই পরে ধীরে ধীরে বউ নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা হয়ে যায়। হয়ে যায় জনপ্রিয় খেলা। তবে যেহেতু এখন মানুষ সভ্য-ভব্য হয়ে গেছে, কাজেই আরেকজনের বউ নিয়ে আর দৌড়ানোর সুযোগ নেই। দৌড়াতে হবে কেবল নিজের বউ নিয়েই।
বউ নিয়ে দৌড়ানোর আর্ন্তজাতিক কিছু নিয়মও আছে। যেমন দৌড়াতে হবে কমপক্ষে ২৫৩.৫ মিটার রাস্তা। এর মধ্যে আবার শুকনো রাস্তার সঙ্গে পানি ভরা জলাও থাকবে। সে জলায় আবার পানির গভীরতা হতে হবে পক্ষে এক মিটার। আর বউয়ের বয়স হতে হবে কম পক্ষে ১৭ বছর। ওজন ৪৯ কেজির কম হলে চলবে না। বউয়ের মাথায় হেলমেট থাকতেই হবে। বলা তো যায় না, কখন হাত ফস্কে বউ পড়ে যায়। তখন তো কেলেঙ্কারির এক শেষ।
ফিনল্যান্ডের আসরে ১৯৯৭ সাল থেকে হয়ে আসছে বউ নিয়ে দৌড়ের প্রতিযোগিতা। চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে কেবল দুটো দেশের প্রতিযোগী। এস্তানিয়া আর ফিনল্যান্ড। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এস্তোনিয়াই ছিল চ্যাম্পিয়ন। ২০০৯ থেকে ফিনল্যান্ডের তিয়াস্তো মেটিনেন ও ক্রিস্তিনা হ্যাপানেন চ্যাম্পিয়ন। এবছরও এ দম্পতিই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
ফিনল্যান্ড ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকায়ও বউ নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে। আর হচ্ছে এশিয়ায়। এশিয়ার কোথায়? ভারতে। ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি ভারতের কেরালায় প্রথম বউ নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মালয়ালাম ভাষায় এর নাম ‘ভারিয়াসামিথাম’।. মানে ‘তোমার বউয়ের সাথে’।
ভারতের বিভিন্ন অংশে এমন দৌড় প্রতিযোগিতা আরো হবে বলেও জানা যায়।