আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সংক্ষিপ্ত জীবনী

নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত এক নেতা। পৃথিবীতে তার মতো এমন নেতা খুব কমই জন্ম নেন। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। বিশ্বের এমন কোন মানুষ নেই যার প্রশংসা তিনি পাননি। এখানে মহান এ নেতার সংক্ষিপ্ত দিনপঞ্জি তুলে ধরা হলো:

জুলাই ১৮ই, ১৯১৮: এদিন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বাংশের গ্রাম মভেজোতে থেমবু রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। 
১৯৪০: ছাত্র ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করার দায়ে তাকে এ বছর ফোর্ট হারে ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
১৯৪৩: এ বছরে তিনি যোগ দেন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে (এএনসি)। 
১৯৪৪: শিক্ষানবিশ এক নার্স এভিলিন মেসকে বিয়ে করেন।
১৯৫২: অলিভার তাম্বোর সঙ্গে জোহানেসবার্গে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য প্রথম আইন চর্চা উন্মুক্ত করেন। 
৫ই ডিসেম্বর, ১৯৫৬: ১৫৬ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। তার মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলাও ছিলেন। 
১৯৫৮: প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তিনি সমাজকর্মী নমজামো জানিয়েউই উইনিফ্রেড উইনি মাদিকিঝেলাকে বিয়ে করেন। 
২১শে মার্চ, ১৯৬০: শার্পভিলেতে নিরাপত্তাকর্মীরা ৬৭ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে। এ সময় সরকার নিষিদ্ধ করে এএনসি, প্যান আফ্রিকান কংগ্রেসকে। ঘোষণা করে জরুরি অবস্থা। 
১৯৬১: সহ-অভিযুক্তদের সঙ্গে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ থেকে খালাস পান।
১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৬১: চালু হয় এএনসির সশস্ত্র শাখা- উমখোনতো উই সিজউই। এর কমান্ডার ইন চিফ বানানো হয় ম্যান্ডেলাকে। 
৫ই আগস্ট, ১৯৬২: তাকে আটক করা হয়। এরপর ৭ই নভেম্বর তাকে হরতাল ও অবৈধভাবে দেশ ছেড়ে যাওয়ার অভিযোগে ৫ বছরের জেল দেয়া হয়। 
১৯৬৩: এই জেল খাটার সময়েই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় স্যাবোটাজের। বলা হয় জোহানেসবার্গের কাছে রিভোনিয়াতে আটক এএনসির অন্য নেতাদের সঙ্গে তিনি ওই স্যাবোটাজ করছিলেন। 
১২ই জুন, ১৯৬৪: আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি ঐতিহাসিক এক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র হলো এমন এক আদর্শ যার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে আমি প্রস্তুত। এ সময় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাঠিয়ে দেয়া হয় কেপটাউনের কাছাকাছি রবেন আইল্যান্ড জেলে। 
৫ই জুলাই, ১৯৮৯: এদিন প্রেসিডেন্ট পিডব্লিউ বোথার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার। ১৩ই ডিসেম্বর সাক্ষাৎ হয় এফডব্লিউডি ক্লার্কের সঙ্গে। পরে বোথার উত্তরসূরি হন ক্লার্ক। 
১১ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০: জেল থেকে মুক্তি পান। 
৫ই জুলাই, ১৯৯১: এএনসির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
এপ্রিল, ১৯৯২: স্ত্রী উইনির থেকে আলাদা হয়ে যান।
১৫ই অক্টোবর, ১৯৯৩: ডি ক্লার্কের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
২৭শে এপ্রিল, ১৯৯৪: দেশের ইতিহাসে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ভোট দেন।
১০ই মে, ১৯৯৪: প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব শুরু হয়।
১৮ই জুলাই, ১৯৯৮: মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট সামোরা মাইকেলের বিধবা স্ত্রী গ্রাকা মাইকেলকে বিয়ে করেন।
১৯৯৯: এক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যান।
১লা জুন, ২০০৪: সরকারি কাজকর্ম থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
৬ই জানুয়ারি, ২০০৫: ঘোষণা দেন যে, তার ছেলে মাকগাথো মারা গেছেন এইডসে।
১৯শে এপ্রিল, ২০০৯: এএনসির আগাম নির্বাচনে সর্বশেষ রাজনৈতিক ভাষণ দেন। তবে তা ছিল রেকর্ড করা। 
নভেম্বর, ২০০৯: জাতিসংঘ ১৮ই জুলাইকে ঘোষণা করে ‘নেলসন ম্যান্ডেলা ইন্টারন্যাশনাল ডে’ হিসেবে। এদিনটি ম্যান্ডেলার জন্মদিন। 
১১ই জুলাই, ২০১০: দক্ষিণ আফ্রিকায় এ বছর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ ফুটবল। এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ম্যান্ডেলার দেখা মেলে।
২৮শে জানুয়ারি, ২০১১: কুনুতে গ্রামের বাড়ি যান।
৮ই ডিসেম্বর, ২০১২: তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। অগ্নাশয়ে ধরা পড়ে পাথর। এর চিকিৎসা নিতে প্রিটোরিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। 
২৬শে ডিসেম্বর, ২০১২: এদিন হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয় ম্যান্ডেলাকে। 
৬ই জানুয়ারি, ২০১৩: চিকিৎসকরা বললেন, জোহানেসবার্গের বাড়িতে ম্যান্ডেলার চিকিৎসাসেবা চলছে। 
৯ই মার্চ, ২০১৩: রাতে তাকে নির্ধারিত মেডিকেল চেকআপের জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়। সারারাত তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। সফল চেকআপের পরই পরদিন তাকে মুক্তি দেয়া হয়। 
২৭শে মার্চ, ২০১৩: নিউমোনিয়ার কারণে তাকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০ দিন সেখানে থাকার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর জোহানেসবার্গের বাসায় চিকিৎসা নিতে থাকেন তিনি। 
৮ই জুন, ২০১৩: ৯৪ বছর বয়সী এ নেতার ফুসফুসে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ে। তবে স্থিতিশীল বলে বলা হয়। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালেই আছেন। তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা তার পূর্বনির্ধারিত মোজাম্বিক সফর বাতিল করেন।