ওরাওঁ বাংলাদেশের একটি নৃগোষ্ঠী। এদের বাসস্থান বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, তারা অস্ট্রিক এবং ভাষাতাত্ত্বিক সূত্রে দ্রাবিড়। এ কারণে অধিকাংশ গবেষক মনে করেন যে, ওরাওঁরা দ্রাবিড়ভাষী কুড়ুখ জাতির উত্তর পুরুষ। ১৮৮১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায় যে, তারা বরেন্দ্র অঞ্চল ছাড়াও ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালী জেলায়ও বসবাস করত।
ওরাওঁ নৃগোষ্ঠীর লোকেরা ভারতে তাদের আদি বাসস্থান থেকে ঠিক কবে এবং কি কারণে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেছিল তা বলা যায়না। শুধু এটুকু জানা যায় যে, তারা মুগল শাসনামলে বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং সে অঞ্চলে তাদের স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলে।
১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে ওরাওঁদের সংখ্যা ছিল ১১২৯৬। কিন্তু বর্তমানে তাদের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বর্তমানে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমণিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাজীপুর, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বসবাস করছে।
ওরাওঁরা জড়োপাসক, তাদের ভগবানের নাম ধরমী বা ‘ধার্মেশ’ বা ‘ধরমেশ’। তাদের মতে, এ ধরমেশই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। তিনি সূর্যে অবস্থান করেন। এ ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে ওরাওঁ সমাজ সূর্যকেও দেবতা হিসেবে জ্ঞান করে। ওরাওঁরা তাদের সৃষ্টিকর্তা ধরমেশকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য তাঁর উদ্দেশ্যে পূজা করে এবং তাঁর উদ্দেশ্যে ‘ডানডাকাঁটা’ উৎসবের আয়োজন করে। তারা মৃত পূর্বপুরুষদের শক্তিসহ ওরাওঁরা নাদ বা প্রেতাত্মায় বিশ্বাস করে এবং তাদের খুশি রাখার জন্য পূজা করে। এছাড়া অনেক ওরাওঁ হিন্দু ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পূজাও করে। ওরাওঁরা গায়ে উল্কি অাঁকে। বড় হওয়ার আগেই ছেলে-মেয়েদের উল্কি অাঁকতে হয়, এটি তাদের ধর্মীয় আচার। তারা বিশ্বাস করে যে, কোনো রমণী বা পুরুষ যদি উল্কিবিহীন অবস্থায় মারা যায় তবে সে ভগবানের রোষানলে পড়বে এবং অনন্তকাল তাকে নরকে বাস করতে হবে।
ওরাওঁরা বিভিন্ন গোত্রের বিভক্ত। যেমন: লাকড়া, তিগগ্যা, তিরকী, বিন্ডো, বাড়ো বা বাড়োয়া, খাঁ খাঁ, করকেটা, টপ্য, এক্কা, খালকো, লিন্ডা, মিনজী, বাকলা, বাড়া, ক্ষেস, গান্না, বেক ও কিসপট্টা। একই গোত্রের সদস্যকে ওরাওঁরা একই বংশের সন্তান বলে মনে করে এবং তারা নিজেদের ভাই-বোন হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে তাদের একই গোত্রের মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
যাবতীয় বিবাদ মেটানো ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গ্রাম সংগঠন আছে যাকে বলা হয় পাঞ্চেস। প্রতিটি গ্রামে একজন হেডম্যান বা মহাতোষ থাকে এবং একজন পুরোহিত বা নাইগাস থাকে। গ্রামের বয়স্ক সাত-আটজন ব্যক্তি দ্বারা পাঞ্চেস গঠিত হয়। পাঞ্চেস-এর কার্যকাল সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য হয়। কোনো অভিযোগকারী যদি পাঞ্চেস-এর বিচারে সন্তুষ্ট না হয়, তবে উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে আপিল করার ব্যবস্থা রয়েছে। পাঞ্চেস-এর উপরের সংগঠনের নাম পাঁড়হা।
ওরাওঁদের ভাষার নাম কুরুক। এ ভাষার কোনো বর্ণমালা নেই। তাদের সাহিত্য মৌখিক। কুরুক ভাষার দিক দিয়ে গায়ের উপরে নিচে এরা দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত। একটি কুরুক অপরটি শাদরী।
ওরাওঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছিল অতি সংক্ষিপ্ত। পুরুষদের নেংটি আর নারীদের ফতা নামের গায়ের উপরে নীচে দুখন্ড ক্ষুদ্র বস্ত্র। এখন তাদের পুরুষেরা লুঙ্গি ও ধুতি পরে। গায় শার্ট ও পাঞ্জাবি পরিধান করে। ওরাওঁ নারীরা ব্লাউজ ও সায়া সহযোগে শাড়ি পরিধান করে। শিক্ষিত ওরাওঁ ছেলেরা প্যান্ট শার্ট পরে এবং মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি পরিধান করে। ওরাওঁ নারীরা বিভিন্ন অলংকার পরিধান করে। তারা নাকে পরে নাকফুল (কারমা শিকড়ি), গায়ে পায়রা, পদনখে মুদদী, চুলের খোঁপায় রূপার কাঁটা (খংশ) প্রভৃতি অলংকার।
ভাত ওরাওঁদের প্রিয় খাদ্য। বনের পশু-পাখি, ফল-মূল, নদী, খাল, বিল, পুকুরের নানা প্রকারের মাছ তাদের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, শূকর, হাস-মুরগি, খরগোস, গুঁইসাপ, বেজি, নেউল, সজারু, কাঠবিড়ালি প্রভৃতির মাংস এবং কচ্ছপ, বাইম, কুচে, কাঁকড়া, ঝিনুক প্রভৃতি খেয়ে থাকে। এছাড়াও তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ডিম। ওরাওঁ সমাজে অতিথি আপ্যায়ন ও উৎসব-অনুষ্ঠানে নেশাদ্রব্য পান করা একটি ঐতিহ্যবাহী অভ্যাস।
ওরাওঁদের গৃহের দেয়াল সাধারণত মাটির এবং ছাউনি শন ও খড়ের। তাদের অধিকাংশ ঘর আকৃতিতে খুবই ছোট। মাথা উঁচু করে খুব কম ঘরেই প্রবেশ করা যায়। ঘরগুলি অধিকাংশই চারচালা বিশিষ্ট। চারচালা ঘরের চারপাশে থাকে বারান্দা। ওরাওঁদের গৃহগুলি খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। গৃহের দেয়াল লেপা-মোছা এবং কোনো কোনো দেয়ালের নিম্নাংশ রঙিন করা হয়। অনেক দেয়ালে অংকন করা হয় গাছ, লতা-পাতা, ফুল, পাখি ইত্যাদি। অঙ্কিত এসব ছবিতে নানা রঙের সমারোহও পরিলক্ষিত হয়।
ওরাওঁ সমাজে নৃত্য ও সঙ্গীত একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র নিজেরাই তৈরি করে। এসব বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ঢোল, মাদকল, বাঁশি, তাল, নাগরা, খঞ্জনী, ঘুটুর ইত্যাদি। তবে সাম্প্রতিককালে ওরাওঁরা হারমোনিয়াম ব্যবহার করতে শুরু করেছে। ওরাওঁ সমাজের পার্বণিক উৎসব মূলত চারটি- ১. সারহুল, ২. কারাম, ৩. পশু উৎসব, ৪. খারিয়ানি, ৫. ফাগুয়া, ৭. সোহরায়।
ওরাওঁ সমাজের বিবাহ পদ্ধতির সবটাই লোকাচার ও দেশাচার নির্ভর। এ সমাজে বর্তমানে দুধরনের বিবাহের প্রচলন লক্ষ করা যায়। ১. চুক্তিবিবাহ, ২. প্রেমঘটিত বিবাহ। তবে অধিকাংশ বিবাহ সম্পন্ন হয় চুক্তিবদ্ধ পদ্ধতিতে। সাধারণত মেয়ের বয়স বারো আর ছেলের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যেই বিবাহ সম্পন্ন হয়ে থাকে। ব্যক্তিক্রমের দৃষ্টান্ত বিরল নয়। বিধবা বিবাহের প্রচলন আছে। সুনির্দিষ্ট কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার বিধানও রয়েছে।
ওরাওঁরা জন্মান্তরবাদী। এ কারণে তারা বিদেহী আত্মার কল্যাণার্থে কতিপয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। ওরাওঁ সমাজে মৃত ব্যক্তিকে পূর্বে দাহ করা হতো। তবে সমাহিত করার নিয়মও প্রচলিত ছিল। সম্প্রতি দাহ করার পরিবর্তে সমাহিত করার প্রচলন বাড়ছে। এর কারণ হয়তো জ্বালানি কাঠের উচ্চ মূল্য। ওরাওঁ সমাজে হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো পিন্ডিদান প্রথা প্রচলিত রয়েছে। মৃত্যুর তিন, পাঁচ, সাত, এগারো বা তেরো দিনে পিন্ডিদান করা হয়ে থাকে।
ওরাওঁদের মাঝে খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মিশনারীদের প্রভাবে খ্রিস্টানধর্মাবলম্বী ওরাওঁদের মধ্যে শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, ভাষা, চলাফেরা প্রভৃতির ওপর বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
ওরাওঁ নৃগোষ্ঠীর লোকেরা ভারতে তাদের আদি বাসস্থান থেকে ঠিক কবে এবং কি কারণে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেছিল তা বলা যায়না। শুধু এটুকু জানা যায় যে, তারা মুগল শাসনামলে বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং সে অঞ্চলে তাদের স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলে।
১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে ওরাওঁদের সংখ্যা ছিল ১১২৯৬। কিন্তু বর্তমানে তাদের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বর্তমানে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমণিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাজীপুর, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বসবাস করছে।
ওরাওঁরা জড়োপাসক, তাদের ভগবানের নাম ধরমী বা ‘ধার্মেশ’ বা ‘ধরমেশ’। তাদের মতে, এ ধরমেশই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। তিনি সূর্যে অবস্থান করেন। এ ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে ওরাওঁ সমাজ সূর্যকেও দেবতা হিসেবে জ্ঞান করে। ওরাওঁরা তাদের সৃষ্টিকর্তা ধরমেশকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য তাঁর উদ্দেশ্যে পূজা করে এবং তাঁর উদ্দেশ্যে ‘ডানডাকাঁটা’ উৎসবের আয়োজন করে। তারা মৃত পূর্বপুরুষদের শক্তিসহ ওরাওঁরা নাদ বা প্রেতাত্মায় বিশ্বাস করে এবং তাদের খুশি রাখার জন্য পূজা করে। এছাড়া অনেক ওরাওঁ হিন্দু ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পূজাও করে। ওরাওঁরা গায়ে উল্কি অাঁকে। বড় হওয়ার আগেই ছেলে-মেয়েদের উল্কি অাঁকতে হয়, এটি তাদের ধর্মীয় আচার। তারা বিশ্বাস করে যে, কোনো রমণী বা পুরুষ যদি উল্কিবিহীন অবস্থায় মারা যায় তবে সে ভগবানের রোষানলে পড়বে এবং অনন্তকাল তাকে নরকে বাস করতে হবে।
ওরাওঁরা বিভিন্ন গোত্রের বিভক্ত। যেমন: লাকড়া, তিগগ্যা, তিরকী, বিন্ডো, বাড়ো বা বাড়োয়া, খাঁ খাঁ, করকেটা, টপ্য, এক্কা, খালকো, লিন্ডা, মিনজী, বাকলা, বাড়া, ক্ষেস, গান্না, বেক ও কিসপট্টা। একই গোত্রের সদস্যকে ওরাওঁরা একই বংশের সন্তান বলে মনে করে এবং তারা নিজেদের ভাই-বোন হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে তাদের একই গোত্রের মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
যাবতীয় বিবাদ মেটানো ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গ্রাম সংগঠন আছে যাকে বলা হয় পাঞ্চেস। প্রতিটি গ্রামে একজন হেডম্যান বা মহাতোষ থাকে এবং একজন পুরোহিত বা নাইগাস থাকে। গ্রামের বয়স্ক সাত-আটজন ব্যক্তি দ্বারা পাঞ্চেস গঠিত হয়। পাঞ্চেস-এর কার্যকাল সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য হয়। কোনো অভিযোগকারী যদি পাঞ্চেস-এর বিচারে সন্তুষ্ট না হয়, তবে উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে আপিল করার ব্যবস্থা রয়েছে। পাঞ্চেস-এর উপরের সংগঠনের নাম পাঁড়হা।
ওরাওঁদের ভাষার নাম কুরুক। এ ভাষার কোনো বর্ণমালা নেই। তাদের সাহিত্য মৌখিক। কুরুক ভাষার দিক দিয়ে গায়ের উপরে নিচে এরা দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত। একটি কুরুক অপরটি শাদরী।
ওরাওঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছিল অতি সংক্ষিপ্ত। পুরুষদের নেংটি আর নারীদের ফতা নামের গায়ের উপরে নীচে দুখন্ড ক্ষুদ্র বস্ত্র। এখন তাদের পুরুষেরা লুঙ্গি ও ধুতি পরে। গায় শার্ট ও পাঞ্জাবি পরিধান করে। ওরাওঁ নারীরা ব্লাউজ ও সায়া সহযোগে শাড়ি পরিধান করে। শিক্ষিত ওরাওঁ ছেলেরা প্যান্ট শার্ট পরে এবং মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি পরিধান করে। ওরাওঁ নারীরা বিভিন্ন অলংকার পরিধান করে। তারা নাকে পরে নাকফুল (কারমা শিকড়ি), গায়ে পায়রা, পদনখে মুদদী, চুলের খোঁপায় রূপার কাঁটা (খংশ) প্রভৃতি অলংকার।
ভাত ওরাওঁদের প্রিয় খাদ্য। বনের পশু-পাখি, ফল-মূল, নদী, খাল, বিল, পুকুরের নানা প্রকারের মাছ তাদের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, শূকর, হাস-মুরগি, খরগোস, গুঁইসাপ, বেজি, নেউল, সজারু, কাঠবিড়ালি প্রভৃতির মাংস এবং কচ্ছপ, বাইম, কুচে, কাঁকড়া, ঝিনুক প্রভৃতি খেয়ে থাকে। এছাড়াও তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ডিম। ওরাওঁ সমাজে অতিথি আপ্যায়ন ও উৎসব-অনুষ্ঠানে নেশাদ্রব্য পান করা একটি ঐতিহ্যবাহী অভ্যাস।
ওরাওঁদের গৃহের দেয়াল সাধারণত মাটির এবং ছাউনি শন ও খড়ের। তাদের অধিকাংশ ঘর আকৃতিতে খুবই ছোট। মাথা উঁচু করে খুব কম ঘরেই প্রবেশ করা যায়। ঘরগুলি অধিকাংশই চারচালা বিশিষ্ট। চারচালা ঘরের চারপাশে থাকে বারান্দা। ওরাওঁদের গৃহগুলি খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। গৃহের দেয়াল লেপা-মোছা এবং কোনো কোনো দেয়ালের নিম্নাংশ রঙিন করা হয়। অনেক দেয়ালে অংকন করা হয় গাছ, লতা-পাতা, ফুল, পাখি ইত্যাদি। অঙ্কিত এসব ছবিতে নানা রঙের সমারোহও পরিলক্ষিত হয়।
ওরাওঁ সমাজে নৃত্য ও সঙ্গীত একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র নিজেরাই তৈরি করে। এসব বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ঢোল, মাদকল, বাঁশি, তাল, নাগরা, খঞ্জনী, ঘুটুর ইত্যাদি। তবে সাম্প্রতিককালে ওরাওঁরা হারমোনিয়াম ব্যবহার করতে শুরু করেছে। ওরাওঁ সমাজের পার্বণিক উৎসব মূলত চারটি- ১. সারহুল, ২. কারাম, ৩. পশু উৎসব, ৪. খারিয়ানি, ৫. ফাগুয়া, ৭. সোহরায়।
ওরাওঁ সমাজের বিবাহ পদ্ধতির সবটাই লোকাচার ও দেশাচার নির্ভর। এ সমাজে বর্তমানে দুধরনের বিবাহের প্রচলন লক্ষ করা যায়। ১. চুক্তিবিবাহ, ২. প্রেমঘটিত বিবাহ। তবে অধিকাংশ বিবাহ সম্পন্ন হয় চুক্তিবদ্ধ পদ্ধতিতে। সাধারণত মেয়ের বয়স বারো আর ছেলের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যেই বিবাহ সম্পন্ন হয়ে থাকে। ব্যক্তিক্রমের দৃষ্টান্ত বিরল নয়। বিধবা বিবাহের প্রচলন আছে। সুনির্দিষ্ট কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার বিধানও রয়েছে।
ওরাওঁরা জন্মান্তরবাদী। এ কারণে তারা বিদেহী আত্মার কল্যাণার্থে কতিপয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। ওরাওঁ সমাজে মৃত ব্যক্তিকে পূর্বে দাহ করা হতো। তবে সমাহিত করার নিয়মও প্রচলিত ছিল। সম্প্রতি দাহ করার পরিবর্তে সমাহিত করার প্রচলন বাড়ছে। এর কারণ হয়তো জ্বালানি কাঠের উচ্চ মূল্য। ওরাওঁ সমাজে হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো পিন্ডিদান প্রথা প্রচলিত রয়েছে। মৃত্যুর তিন, পাঁচ, সাত, এগারো বা তেরো দিনে পিন্ডিদান করা হয়ে থাকে।
ওরাওঁদের মাঝে খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মিশনারীদের প্রভাবে খ্রিস্টানধর্মাবলম্বী ওরাওঁদের মধ্যে শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, ভাষা, চলাফেরা প্রভৃতির ওপর বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া